Ads

এই বছরের সেরা রোমান্টিক প্রেমের বিরহী গল্প "মায়াবতী" @মিঃ মধু

গল্প "মায়াবতী"


পর্ব (০১)
এই বছরের সেরা রোমান্টিক প্রেমের গল্প "মায়াবতী" @অদৃশ্য কাব্য

এত রাতে আমার ঘরে একটা মেয়ে বসে আছে , এখন আমার কি করা উচিত ?
গভীর রাতে চরের মধ্যে নিজের ঘরে যদি একটা অপরিচিত মেয়ে দেখতে পাই তবে নিজেকে কি মনে হবে ? আমি কি খুব সুন্দর দেখতে ? তাই আমার ঘরে পরি বসে আছে । নাহলে এখনকার এই জনমানবহীন এলাকায় চরের মধ্যে আমার ঘরে মেয়ে আসবে কিভাবে ?
রাত প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, আমি মাত্র নদীর ঘাট থেকে এসেছি । কিন্তু কাশফুলের মাঝে সবুজ ঘাস দিয়ে নির্মিত আমার ঘরের ভিতর প্রবেশ করে দেখি একটা মেয়ে বসে আছে । ঘরের মধ্যে মশাল জ্বেলে নদীর ঘাটে গেছিলাম সেটা এখনো জ্বলছে । সেই মশালের আলোয় মোটামুটি দেখতে পাচ্ছি ।
আমি যেখানে বাস করি এখান থেকে ৪ কিঃমিঃ পথ অতিক্রম করে গ্রাম শুরু হয়েছে । 
কিন্তু সেই গ্রামের সবাই কে আমি চিনি তবে এই মেয়েটিকে চিনতে পারছি না । 
আমি মোটামুটি নিশ্চিত ইনি ঐ গ্রামের মানুষ নন ।
আসমানী সাদা সাড়ি পরিহিত যেন মনে হয় সে এই পূর্নিমার রাতে জোৎস্না দেখতে এসেছে । কারণ জোৎস্না দেখতে হয় সাদা ধবধবে সাড়ি পরে । আর বৃষ্টির দিনে প্রিয় মানুষের জন্য গোলাপের পরিবর্তে দিতে হবে কদম ফুল । আমার এই চরের মধ্যে আছে শুধু ছায়াঘেরা কাশফুলের মেলা ।
হাত ভর্তি বিভিন্ন রঙের চুড়ি , বাম হাতের চেয়ে ডান হাতে চুড়ির পরিমাণ বেশি ।
কপালের ঠিক মাঝখানে একটা টিপ পরেছে কিন্তু রঙটা স্পষ্ট বুঝতে পারছি না আমি । মনে হয় খুব যত্ন করে টিপপা পরা হয়েছে কারণ কোন ত্রুটি খুঁজে পাচ্ছি না ।
মাথার চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে । যদিও বসে আছে কিন্তু আন্দাজ করে যা বুঝতে পারছি তা হলো চুল কোমড় ডিঙিয়ে নিচে নামবে ।
পায়ে জুতা নেই কিন্তু দুটো পায়ের একটা পায়ে নুপুর চকচক করছে । কিন্তু আরেক পায়ে নুপুর নেই কেন বুঝতে পারছি না আমি । সে কি ইচ্ছে করে পরেনি নাকি চলার পথে হারিয়ে ফেলেছে ? পা হতে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে শুধু এক পায়ে নুপুর নেই সেটাই চিন্তা করার মত দেখতে পাচ্ছি ।
নিজের অনুভূতি কেমন ছিল বুঝতে পারছি না কিন্তু নুপুরের বিষয় বেশি কৌতূহল ছিল । 
তাই সবকিছুর কৌতূহল বাদ দিয়ে আমি প্রথমেই তার এক পায়ের
নুপুরের অনুপস্থিতি জানতে চাইলাম ।
-- আপনার একটা পায়ে নুপুর নেই কেন ? (আমি)
-- আমার প্রশ্ন শুনে চমকে উঠলাে সে, কিন্তু আস্তে করে মাথাটা নিচু করে সেও দেখতে পেল তার এক পায়ে নুপুর নেই । আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো :- চরের মধ্যে কাশফুলের মধ্যে দৌড়াতে গিয়ে হয়তো ছিড়ে পরে গেছে । (মেয়ে)
-- দৌড়াচ্ছিলেন কেন ?
-- তিনটে খারাপ ছেলে আমাকে নদীর ওপার থেকে জোর করে ধরে এনেছে । চরের মধ্যে এসে ওদের চোখে বালি মেরে অন্ধকারে পালিয়ে এসে এই ঘরের মধ্যে বসেছি ।
-- আপনার নাম কি ?
-- আমার নাম হচ্ছে *পাপড়ি* আপনার নাম কি ?
-- আমার নাম মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব, কিন্তু এই নিস্তব্ধ চরের মধ্যে কাশফুল দিয়ে ঘেঁষা পাতির মাঝে থাকি । আর সামনের নদীতে দিনের বেলা মাছ ধরি রাতের বেলা খেয়াঁ পার করি । তাই সবাই এখানে আমাকে কাশফুলের মাঝি বলে ডাকত । তবে আস্তে আস্তে সবাই সংক্ষিপ্ত করে ফুল মাঝি বলে ডাকা শুরু করেছে ।
-- চরের মধ্যে তো আপনি ছাড়া আর কোন মানুষ দেখতে পাচ্ছি না । তাহলে এখানে কারা আপনাকে ফুল মাঝি বলে ডাকে ?
-- এখান থেকে সোজা দক্ষিণে ৪ কিঃমিঃ পরে একটা গ্রাম আছে । গ্রামের নাম * উজান চর *। সেই গ্রামের সবাই আমাকে চেনে । গ্রামের মধ্যে ১২৮ টা পরিবার বাস করে । কিন্তু আপনার বাসা কোথায় জানতে পারি ? নদীর ওপাড়ে নাকি ?
-- আমার বিষয় সব কথা পরে বলবো কিন্তু আগে আপনার সাথে কথা বলি । আচ্ছা আমাকে একটা কথা বুঝিয়ে বলবেন ?
-- কি কথা ?
-- গ্রামের সবার সঙ্গে না থেকে আপনি এই নির্জন নিস্তব্ধতা বিদীর্ণতার মাঝে একা থাকেন কেন ?
-- গ্রামের মধ্যে আমার একটা বড় ঘর আছে কিন্তু সেখানে আমি থাকি না । বছর খানিক আগে একটা হিন্দু মহিলাকে এই চরের মধ্যে পেয়েছিলাম । তিনি আত্মহত্যা করার জন্য নদীতে ঝাপ দিয়েছিলেন কিন্তু মরেনি । তাকে আমি আমার সেই ঘরে থাকতে দিয়েছি এবং এখনো তিনি সেখানে আছেন । আমি তাকে দিদি বলে ডাকি তবে আমি কিন্তু মুসলিম ।
-- আপনি মুসলিম সেটা আপনার নাম মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব সেটা শুনে বুঝতে পারছি । কিন্তু গ্রামের সেই ঘরে আপনার কুড়িয়ে পাওয়া দিদি বাস করে, কিন্তু আপনার মা-বাবা কোথায় থাকে ?
-- সে অনেক লম্বা ঘটনা ?
-- আমার কোন তাড়া নেই, আপনি আপনার সম্পুর্ণ গল্প টা বলবেন প্লিজ ?
-- রাত প্রায় শেষ হয়ে গেছে বাহিরে আকাশ ভেঙ্গে জোৎস্নার আলো ঝড়ছে । তাহলে চলুন নদীর তীরে আমার একটা শক্ত মাচা তৈরি আছে । সেখানে বসে সুন্দর জোৎস্না আর নদীর মৃদু ঢেউ কিংবা বড় বড় স্টিমার ট্রলার দেখতে দেখতে বলি ।
-- ঠিক আছে চলুন ।
এই বছরের সেরা রোমান্টিক প্রেমের গল্প "মায়াবতী" @অদৃশ্য কাব্য
★★★
বাহিরে সত্যি সত্যি অনেক সুন্দর জোৎস্না ফুটেছে । শরতের কাশফুল শেষ রাতের বাতাসে উড়ছে কত নিপুণ কৌশলে । নৌকার পাটায় বসে দেখছো দূরের আকাশ অপেক্ষা গুলো বুঝাচ্ছে হইতো আর না ফেরার পূর্বাভাস ।
পিছনে ফিরে তাকানোর ইচ্ছে সবসময় থাকে না কিন্তু মনের নীড়ে ফিরতে হবে চিরন্তন । কতদিন ধরে আমি একা একা নদীর তীরে জোৎস্না দেখে দেখে রাত পার করেছি । সো সো বাতাসের তীব্র চলনে নিজের অস্তিত্ব খুঁজেছি কত নিভৃতেই , বৃষ্টির মধ্যেও এই চরের মধ্যে একা একা বসে ছিলাম পথিকের বেশে ।
আমরা নদীর তীরে মাচান এর উপর গিয়ে বসলাম । কেন যেন মেয়েটাকে খুব একটা খারাপ মনে হচ্ছে না তাই এত কৌতূহল নিয়ে তার সাথে কথা বলি ।
-- এবার বলেন । (পাপড়ি)
-- আমার গ্রামের বাড়ি ছিল শরিয়তপুর জেলার মধ্যে পদ্মা নদীর তীরে । মা-বাবা আমি আর বড় দুই বোন নিয়ে আমাদের পরিবার ছিল । আজ থেকে প্রায় ১৬ বছর আগে আমরা সেখানে বাস করতাম । এখন আমার বয়স ২৬ বছর যখন আমার বয়স ১১ বছর তখন আমরা শরিয়তপুরে ছিলাম । সে বছর বর্ষার মৌসুমে পদ্মা নদী ভয়ংকর হয়ে গেল । তার পেটের মধ্যে বিলীন হয়ে গেল হাজার হাজার মানুষ ও তাদের বসতবাড়ি ।
একদিন দিনের বেলা আমাদের বাড়ির আশেপাশ সহ অনেক জমি পদ্মা নিয়ে গেল । আমরা সবাই আধ কিঃমিঃ দুরে একটা চাচার বাসায় গিয়ে উঠি । রাতের বেলা আমরা সবাই ঘুমিয়ে ছিলাম কিন্তু সেই ভয়ংকর পদ্মা নদী ঘুমায়নি । এক রাতের মধ্যে সেই আধ কিঃমিঃ সহ গ্রামের অর্ধেক বিলীন হয়ে গেল ।
যখন নদীর মধ্যে আমরা সবাই ঘুমন্ত অবস্থায় ডুবে যাচ্ছিলাম তখন কিছুই করার ছিল না । এরপর আমি যখন চোখ মেলে তাকালাম তখন দেখি আমি একটা বড় মাছ ধরা নৌকার মধ্যে সুয়ে আছি । তারা আমাকে নোয়াখালীর সুবর্ণচরের সৈকতের কাছ থেকে পেয়েছে ৷
আমার মা-বাবার আপা দের আর কোন খবর আমি জানিনা । বেচে আছে কি সেই রাতে সবাই মা-রা গেছে তাও জানিনা আমি । গ্রামের বাড়ি আর ফিরে যেতে ইচ্ছে করেনি কখনো কারণ নিজের চোখে দেখেছি সবকিছু পদ্মা নিয়ে গেছে । তাই সেখানে গিয়ে কার কাছে আশ্রয় চাইবো ?
যারা আমাকে চরের মধ্যে থেকে তুলে এনে নতুন জীবন দিল । তাদের মধ্যে ছবুর মাঝি আমাকে নিয়ে আসেন এই উজান চরে মাঝে । তখন থেকে আমি এই গ্রামের মাঝে আছি । ছবুর মাঝি কে আমি দাদু বলে ডাকতাম, তিনি মা-রা গেছে ৭ বছর আগে ।
তবে তার জীবত অবস্থায় আমাকে সে একজন দক্ষ মাঝি বানিয়ে গেছে । গ্রামের মাঝে আমার মত বলিষ্ঠ যুবক আর নেই । তাই সবাই আমাকে খুব ভালো করে চেনে ও ভালবাসে ।
-- কিন্তু এই রাতের আঁধারে আপনি ঘাটে নৌকা বাধিয়ে রেখেছেন কেন ?
-- গ্রামের মানুষের যাবতীয় প্রয়োজনীয় সবকিছু নদীর ওপাড়ে গিয়ে আনতে হয় । তাই এখান থেকে নৌকা করে খেয়াঁ পার হয়ে সবাই ওপাড়ে একটা বড় বাজার আছে সেখানে যায় । বাজারের নাম হচ্ছে
* সোনাদিয়া দ্বীপের বাজার * ।
-- আপনি কি দিনের বেলা নৌকা চালান ?
-- না আমি রাতের বেলা নৌকা চালাই । দিনের বেলা আমাদের গ্রামের তিনজন আছে আর ওপাড়ে সোনাদিয়া বাজারের দুজন আছে এরা নৌকা চালান আর আমি মাছ ধরি । সেই মাছ বিক্রি করে আমার দিদি আর আমার সংসার চলে । তবে শুধু আমার টাকা দিয়ে নয়, আমার দিদি হাতের অনেক কাজ জানে । মাটি দিয়ে মাটির তৈরি সকল হাঁড়ি পাতিল বানাতে পারে । গ্রামের মানুষের কাছে সেগুলো বিক্রি করে দিদি অনেক টাকা আয় কর । আমার দিদির ইচ্ছে একসময় আমরা অনেক বড় ব্যাবসা করবো ।
-- আপনার দিদি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন কেন সে কথা জিজ্ঞেস করেছেন কখনো ?
-- হ্যা করেছি ।
-- কেন ?
-- তার একটা তিন বছরের ছেলে ছিল । সেই সন্তান নিয়ে তিনি নদীতে গোসল করতে গিয়েছিলেন । পরে সেখানে গোসল করার সময় তীব্র স্রোতের মধ্যে তার ছেলে হাত ফসকে মেঘনার বুকে চলে গেল ।
-- তার বাসা ছিল কোথায় ?
-- ভোলা জেলার চরফ্যাশন থানায় মেঘনা নদীর তীরে । তবে আমরা যেখানে আছি এটাও ভোলা জেলার মধ্যে পরেছে । কিন্তু আমরা মনপুরা থানার মধ্যে ।
-- তারপর আপনার দিদির কি হলো ?
-- দুপুর ১২ টা বাজে গোসল করাতে এসে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীর তীরে তীরে পাগলের মত সন্তানকে খুঁজে ফিরেছে । কিন্তু সৃষ্টি কর্তা তার মনের আশা পুরন করেনি সর্ব আগ্রাসী মেঘনা দিদির ছেলেকে আর ফেরত দিল না । তার স্বামীর বাড়ির সবাই তাকে দোষারোপ করে বিভিন্ন ভাবে মানসিক ও শারিরীক কষ্ট দিতে থাকে । নিজের সন্তান কে হারিয়ে যিনি জীবনের মায়া ছেড়ে দিলেন ৷ সেই তাকেই যখন নিজের পরিবার দোষারোপ করলো তখন তিনি পৃথিবীর মাঝে বেচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পেলেন না । তাই তিনিও নিজের সন্তানের কাছে যাবার জন্য নদীতে ঝাপ দিয়েছিলেন কিন্তু সন্তানের কাছে যেত পারলো না ।
-- খুবই বেদনা ভরা কথা ।
-- এবার আপনার কথা বলেন ।
-- আমার কথা আজকে আর বলা হবে না মনে হয় সেটা বুঝতে পারছি আমি ।
-- কেন ?
-- নদীর ওপাড়ের মসজিদ হতে ফজরের আজান শোনা যাচ্ছে, শুনতে পাচ্ছেন আপনি ?
-- হ্যা ।
-- আমাকে এখন যেতে হবে, সূর্য ওঠার আগেই আমাকে আমার বাসায় যেতে হবে । আপনার নাম তো ফুল মাঝি তাই না ?
-- হ্যা ।
-- নৌকা ছাড়ার ব্যবস্থা করেন আমি ওপাড়ে যাব । তবে নৌকায় বসে আমার বিষয় নিয়ে সামান্য কিছু বলে যাব ।
-- তাহলে আপনি অপেক্ষা করুণ আমি ঘর হতে বৈঠা নিয়ে আসি ।
-- শুনন আরেকটা কথা ।
-- বলেন ।
-- আপনার ঘরের মধ্যে একটা কালো চাদর দেখেছি আমি সেটা নিয়ে আসবেন ।
-- কেন ?
-- ওপাড়ে গিয়ে সবার চোখের অন্তরাল হয়ে আমি আমার বাড়িতে চলে যাব । নাহলে সবাই যদি বুঝতে পারে তবে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে ।
-- আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে আসবো ।
এই বছরের সেরা রোমান্টিক প্রেমের গল্প "মায়াবতী" @অদৃশ্য কাব্য


★★★
নৌকার মধ্যে মাঝখানে বসে আছে মেয়েটি , আজান শেষ হবার পরে দিনের আলো সামান্য ফুটতে শুরু করেছে । নদীর মধ্যে খোলা আকাশের নিচে আলো বেশি দেখা যায় । দিনের আলোতে উজ্জ্বল হয়ে দেখা যেত তাকে কিন্তু সে চাদর জড়িয়ে মুখের অর্ধেক আবৃত করে রেখেছে ।
এবার আবারও মেয়েটি প্রশ্ন করলো, তবে এই প্রথম সে আমাকে তুমি করে বললো :-
-- আচ্ছা মাঝি, তুমি কখনো কাউকে মন দিয়ে ভালবাসছো ? (পাপড়ি)
-- না সেটা এখনো হয়নি । (আমি)
-- আমার বিষয় জানতে চাইবে না ?
-- আপনি না বললে থাক ।
-- আচ্ছা বলবো, তার আগে তোমার ভালবাসার খবর টা নিয়ে নি ।
-- আমার ভালবাসার কোন গল্প নেই ।
-- কাউকে ভালো লাগেনি কোনদিন ? মানে কাউকে ভালবাসতে ইচ্ছে করেনি ? কাউকে দেখে তার সাথে ঘর বাধার স্বপ্ন জাগেনি ?
-- আপনার বাড়ি তো ওপাড়ে তাই না ?
-- হ্যা ।
-- সোনাদিয়া বাজার চিনেন তো নিশ্চয়ই ?
-- হ্যা ।
-- ওখানে একমাস ব্যাপি যাত্রা হচ্ছে জানেন ?
-- হ্যা জানি, ১১ দিন পার হয়ে গেছে ।
-- আমি প্রথম দুই দিন গিয়েছিলাম, সেখানে একটা মেয়ে খুব সুন্দর নাচতে পারেন । যাত্রার মধ্যে সব সময় ভির একটু বেশি হয়, আর আমি চাইলেই তো যেতে পারি না । যখন যাই তখন টিকিট কেটে সবার পিছনে দাড়িয়ে দেখতে হয় ৷ মেয়েটিকে ভালো করে কখনো দেখতে পারিনি আমি তবে তার নিখুঁত নাচ দেখার পরে সবসময় কল্পনা করি । যদি আমার এমন একটা বউ থাকতো তবে সারাক্ষণ চোখের সামনে দাড়িয়ে নাচতো । তার সেই শাড়ির আঁচল দিয়ে আমি ফুল মাঝির ঘাম মুছে দিত । আমি নদীতে মাছ ধরতাম আর সে পাতিল নিয়ে পাড়ে হাঁটতো । তাকে নিয়ে জোৎস্নার রাতে নৌকা করে মাঝ নদীতে গিয়ে বৈঠা রেখে জোৎস্না দেখতাম ।
-- আপনি তার নাম জানেন ?
-- সবাই *মায়াবতী* বলে চেনে তাকে ।
-- তার সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করে, মানে আপনি কি আপনার মনের কথা তাকে বলতে চান ?
-- হ্যা দেখা করতে চাই, তবে মনের কথা বলবো কিনা জানিনা আমি ।
-- তাহলে আজকে রাতে ঠিক ১২ টা বাজে যাত্রার বাইরে প্রফুল্ল ঘোষের মিষ্টির দোকানে অপেক্ষা করবেন ।
-- আপনি তাকে চিনেন ?
-- হ্যা মোটামুটি চিনি ।
-- আপনি কি থাকবেন তার সাথে ?
-- হ্যা ।
-- আচ্ছা ঠিক আছে তাই হবে ।
-- মনে রাখবেন, ঠিক ১২ টা বাজে অপেক্ষা করবে তুমি । তবে তাকে নিয়ে আসতে আমার দেরি হলেও তুমি দোকান বন্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে । দোকান বন্ধ হয়ে গেলেও বন্ধ দোকানের সামনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করবে ।
-- আচ্ছা ঠিক আছে ।


পর্ব (০২)
এই বছরের সেরা রোমান্টিক প্রেমের গল্প "মায়াবতী" @অদৃশ্য কাব্য
কালো চাদর জড়িয়ে পাপড়ি নদীর ঘাট দিয়ে হেঁটে উঠে গেল । কয়েক কদম সামনে গিয়ে আবারও সে পিছনে ফিরে একবার দেখলো । আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি কিন্তু মুখের মধ্যে কোন কথা বের হচ্ছে না । মনের মধ্যে একবার সন্দেহ হলো, সত্যি সত্যি আবার দেখা হবে তো ?
ঘাটে আরো ৫ টা নৌকা বাধা আছে কিন্তু এর মধ্যে আমাদের গ্রাম উজান চরে যাবে একটা নৌকা । সেই নৌকার মাঝির নাম মকবুল মাতুব্বর, কিন্তু সবাই তাকে মাতবর মাঝি বলে ডাকে । বাকি চারটি নৌকা যাবে এখান থেকে পূর্ব দিকে একটা গ্রাম আছে সে গ্রামের মধ্যে ।
মাতবর মাঝি পাপড়ির কথা কিছু জিজ্ঞেস করবে কিনা জানিনা তবে মনে হয় করবে না । কারণ আমি ঐ গ্রামের মধ্যে অপরিচিত কেউ না তাই তিনি মনে করবেন হয়তো গ্রামের কাউকে এনেছি ।
খালি নৌকা নিয়ে আবার ঘাটের বাঁধন খুলে নৌকা নদীতে ভাসিয়ে দিলাম । সকালের সূর্য হালকা করে উঁকি দিচ্ছে আর নদীর ঢেউয়ের সাথে চিকচিক করে রঙিন হচ্ছে ।
আমি মা-বাবার সাথে যখন ছিলাম তখন আমার বাড়ি থেকে ৭ মাইল দূরে একটা প্রাইমারী স্কুল ছিল সেখানে ক্লাস ফোরে পাশ করছি । তারপর থেকে তো নদী ভাঙ্গনে সব গেল তাই আর পড়াশোনা করা হলো না ।
পাপড়ি নামের মেয়েটির কাছে আমি একটা কথা লুকিয়েছি । তা হচ্ছে এখানে আসার পরে উজান চরে একটা মেয়ের সঙ্গে আমার খুব বন্ধুত্ব ছিল । তার নাম ছিল পাখি । সে আমার চেয়ে ৫-৬ বছরের ছোট হবে, তখনকার দিনে এই নদী অতিক্রম করে সে পড়াশোনা করতো ।
আমি প্রথম যখন উজান চরে আসলাম তখন পাখি কেবল স্কুলে ভর্তি হলো । দাদু ছবুর মাঝির সাথে আমি তখন নৌকার মধ্যে থাকতাম । গ্রামের মধ্যে দুজনের বাড়ি গ্রামের দুই প্রান্তে তাই প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময়ে তার সাথে দেখা হতো ।
ছবুর মাঝি দাদু মা-রা যাবার পরে আমি তাকে নদী পার করাতাম । সে মেট্রিক পাশ করতে পারে নাই তার আগেই তাকে বিয়ের পিরিতে বসতে হলো । সে যদি মেট্রিক পাশ করতে পারতো তবে আজ তার হয়তো অনেক ভালো একটা চাকরি হতো । শহরের মাঝে সে সাহেবদের সাথে ওঠাবসা করতো কিন্তু সেটা তার হলো না ।
আমি কখনো বড় কোন শহরে যাইনি, তবে একবার নোয়াখালী শহরে গেছিলাম আমাদের একটা অসুস্থ মানুষ কে নিয়ে । তখন আমি প্রথম সেখানে গাড়ি দেখেছি যেগুলো গরু ছাড়া চলে ।
পাখির জীবনে সুখ বেশিদিন ছিল না, বিয়ের সতের দিন পরে ওর স্বামী মজনু মাঝি সাহরে মাছ ধরতে গিয়ে নৌকা ঢুবে মারা গেল ।
পাখি এখন ওর মা-বাবার সংসারে আছে । আমি ও মাঝে মাঝে ওর কাছে যাই । পুরনো দিনের গল্প করি দুজনেই পাশাপাশি বসে বসে সামনে থাকে কাচা ধানের চিঁড়া আর গুড় ।
পাখির কাছে আমি বাংলা পড়েছিলাম, এবং অনেক কবিতা লিখতে শিখেছিলাম । নিজে যদিও ক্লাস ৫ পাশ করতে পারি নাই কিন্তু বাংলা পড়ে মোটামুটি সহজ বাংলা বলা শিখেছিল ।
নদীতে নৌকা চালাচ্ছি আর শরতের সাদা ধবধবে আকাশে তাকিয়ে মনে মনে কবি সাজাচ্ছি ।
√√√√
তুমি সুন্দর,
কি ভয়াবহ সুন্দর তুমি !
মনের মাধবী সাজানো তুমি ।
ভালবাসতে ইচ্ছে হয়
কিন্তু বাসিনা ।
কারণ আমার তো আবার
ভালোবাসা সয় না !
তেল আর জল নাকি
এক সাথে হয় না ।
ঠিক আছে, ভালবাসবো না না হয়,
কাছে ও আসবো না ?
ঠোঁটের আগায় চুমু নিয়ে ঘুরবো
তবু তোমায় ছুব না ।
বিনিময়ে আমিও
তোমার গোপন কেউ ।
ধরো, আমি অন্ধকারে বসে
তোমায় নিয়ে কবিতা লিখবো ।
আর তুমি আমি ছায়ায় বসে
তা আবৃতি করবো,
আমি জলের দাগে জানালার
শার্শিতে তোমার ছবি আঁকবো ।
আর তুমি তা বৃষ্টির ঝাপটায় মুছে দিবে ।
অথবা তুমি বারান্দায়
দাঁড়িয়ে এক লহমা নিঃশ্বাস ছুঁড়ে দিলে ।
আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে তা শুষে নিলাম !
আমৃত্যু খেলে যাবো
একই খেলা গোপনে গোপনে,
কেউ জানবে না কথা দিলাম
হৃদয়ের একান্ত সন্ধিক্ষণে ।
এই বছরের সেরা রোমান্টিক প্রেমের গল্প "মায়াবতী" @অদৃশ্য কাব্য


★★★
গ্রামের মধ্যে যখন পৌছালাম তখন বেলা এক প্রহর শেষ হয়ে গেছে । নদী থেকে গোসল করে এসেছি এ সুনসান নীরবতা আবহাওয়ার মধ্যে এখন তৃপ্তি করে ঘুমাবো । গতরাতে একবিন্দু ঘুমাতে পারিনি আবার আজকে রাত জাগ্রত হবার সম্ভবনা আছে ।
গ্রামের এক কিনারে আমার বাড়ি তাই প্রায় শেষ সীমানা ছাড়ায়ে যেতে হবে । পথের মাঝে গ্রামের এক পরিচিত চাচার সাথে দেখা হলো । তার মেজো মেয়ের বিয়ে ঠিক করা হয়েছে কিন্তু মেয়ের জামাই কে ২০০০০ টাকা নগদ দিতে হবে । তিনি টাকা দেবার কথা শিকার করছেন তাই এখন সেটা যোগাড় করার চেষ্টা চলছে ।
বাড়ির সামনে দাড়িয়ে ভিতরে পাখির কন্ঠ শুনতে পাচ্ছি । তবে পাখি দিনের মধ্যে একবার করে দিদির সাথে দেখা করতে আসে সবসময় । আমি সোজা বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে দেখি দিদি আর পাখি বসে আছে ।
-- আমি দিদির দিকে তাকিয়ে বললাম, দিদি খুব ক্ষুধা লেগেছে খেতে দাও ।
-- দিদি বললো তুমি হাত মুখ ধুয়ে পাতার আসন পেতে বসো আমি খাবার দিচ্ছি ।
-- আমি আসন পেতে খাবার অপেক্ষা করছি কিন্তু খাবার নিয়ে আসলো পাখি ।
-- আমার সামনে খাবার দিয়ে বললো, আজকে মাঝিকে এত খুশি খুশি লাগে কেন ? আর এত বেলা করে বাড়িত আসলা খবর সব ভালা নি ?
-- সব ভাল আছে সকাল বেলা একজনকে নিয়ে ওপাড়ে গেছিলাম তারপর আসতে দেরি হয়ে গেল ।
-- বেনের (সকাল) বেলা তো তোমার নাও(নৌকা) বাওনের কথা না মাঝি ।
-- এমনিতেই গেছিলাম, সকালের নদীর মধ্যে নৌকা বাইতে ভালোই লাগে ।
-- তোমারে না কইছিলাম মাঝি, আমারে একদিন যাত্রা দেখাইতে লইয়া যাইতে, নিবানা মাঝি ?
-- হহ নিমুনে যাত্রা অহনো ১৮ দিন আছে ।
-- কবে নিবা কওনা ।
-- তুই তো ওপাড়ে স্কুলে পড়াশোনা করছো তাহলে তোরে নিয়া যাইতে অইবো কেন ?
-- হোনো মাঝির কথা, রাইত বিরাইতে মাইয়া মানুষ একা একা কেমনে যামু ?
-- আচ্ছা ঠিক আছে, আজকে তো হইবো না তবে আগামীকাল নিয়ে যামু ।
-- অখন কি মাছ ধরতে যাইবা ?
-- না, একন ঘুমাবো আমি ।
-- কেন বেশি কষ্ট হইচে নি ?
-- না, প্রতিদিন রাতে বেশি ঘুমাতে পারিনা তাই চোখ জ্বলে । আজকে এখন ঘুমাবো ।
-- আইচ্ছা, তুমি থাকো মাঝি, মায়ের শরীর টা বেশি ভালা না । আমি যাইগা ।
-- আচ্ছা ঠিক আছে, আগামীকাল তোরে নিয়ে যামু আমি মনে থাকে যেন ।
-- থাকবো ।
এই বছরের সেরা রোমান্টিক প্রেমের গল্প "মায়াবতী" @অদৃশ্য কাব্য


★★★
সন্ধ্যার পরে উজান চরের কিছু মানুষ সোনাদিয়া বাজারে যাত্রা দেখতে আসলো । আমি তাদের নিজে নৌকা পার করিয়া দিলাম কিন্তু সংশয় হচ্ছে এদের সেই যাত্রা শেষ হইলে আনতে হইবে । নিজের ব্যাস্ততা বুঝাইয়া উজান চরের এক মাঝিকে আজকে রাতের বেলা খেয়াঁ পার করিতে বলিলাম ।
আমার কাছে ঘড়ি নেই আর তাছাড়া কখন ১২ টা বাজিবে তা চন্দ্র দেখে অনুভব করতে পারবো । আমি মধ্যেরাতের পূর্বে সোনাদিয়া বাজারে গিয়ে ঘাটের কাছে নৌকা না বাধিয়া দূরে বানলাম । কারণ যদি মায়াবতীকে নিয়ে সত্যি সত্যি পাপড়ি আসে তাহলে তখন হয়তো ⛵ নৌকায় উঠতে হবে ।
কিন্তু ঘাটের কাছে নিজেদের পরিচিত মানুষ নৌকায় না তুলে যদি অপরিচিত মেয়ে নিয়ে আসি তখন সন্দেহ বাড়িবে ।
আমি বাজারের ভিতর গিয়ে সেই মিষ্টির দোকানে অপেক্ষা করতে বসে গেলাম । কিন্তু অপেক্ষার প্রহর একটু বেশি বিরক্তিকর মনে হচ্ছে নিজের কাছে । নানা ধরনের মানুষের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে সবাই নিজ নিজ দায়িত্বে আনন্দে ব্যাস্ত ।
বাজারের মধ্যে একটা খালি যায়গাতে বাঁশের বেড়া দিয়ে যাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছে । মিষ্টির দোকানে থেকে
মাঝে মাঝে যাত্রার দর্শকের হই হুল্লোড় শোনা যায় ।
যাত্রার মাইকে গান হচ্ছে, বাজনা বাজাচ্ছে, কত যে মুখরিত মনে হয় ।
এই বছরের সেরা রোমান্টিক প্রেমের গল্প "মায়াবতী" @অদৃশ্য কাব্য


★★
ঘড়িতে সময় কত সেটা জানিনা তবে হঠাৎ করে দেখলাম দোকানের মধ্যে আমার কালো চাদরটা জড়িয়ে একটা মেয়ে প্রবেশ করলো । তার মুখ ছিল অর্ধ আব্রিত, সে চাদর দিয়ে মুখ ঢাকিয়া আমাকে লক্ষ্য করে বললো, * মাঝি চলো আমাদের দেরি হয়ে গেল । *
আমি কন্ঠ চিনতে পেরেছি এ হচ্ছে পাপড়ি, কিন্তু সাথে দ্বিতীয় কোন মেয়ে দেখতে পাচ্ছি না । তবে ভাবলাম সে হয়তো বাহিরে অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছে । তাই তাড়াতাড়ি তার সাথে দোকান থেকে বের হয়ে গেলাম ।
-- বাহিরে বেরিয়ে পাপড়ি আমাকে বললো, মাঝি তোমার নৌকায় চলো পরে সব কিছু বলবো ।
-- আমি অন্ধকারে সামনে সামনে হাঁটছি কর সেই পাপড়ি আমার পিছনে পিছনে আসছে ।
-- নৌকায় উঠিয়া পাপড়ি বললো, মাঝি নৌকা ছেড়ে দাও মায়াবতী আসবে না । তার হঠাৎ করে শরীর টা ভালো লাগে না ।
-- আমি নৌকা ছাড়িয়া দিলাম, পাপড়ি নৌকার মধ্যে গলোইতে বসে আছে । আজকেও চাঁদ উঠেছে সেই জোৎস্নার আলো নিয়ে অজস্র মানুষের জন্য । তবে আমার মনে ভরসা ছিল আজকে মায়াবতীর সাথে দেখা হবে । কিন্তু সেটা পূরণ হলো না তবে পাপড়ি আমার সামনে আছে সেটাও অনেক ভালো লাগার মতো ।
-- মাঝি আমি বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না, ঘন্টা খানিক পরে চলে যাব । একটা কথা জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে জিজ্ঞেস করবো ?
-- হুম বলেন ।
-- এতরাত জেগে তুমি মায়াবতীর জন্য অপেক্ষা করে আছো তাই না ?
-- ঠিক তা নয়, তবে আপনাকে কথা দিয়েছি সেটা রক্ষা করাটাও উচিত ছিল ।
-- আমি তাকে তোমার কথা বলছি মাঝি ।
-- সে কি দেখা করতে চাইছে ?
-- হ্যা ।
-- আচ্ছা মাঝি একটা কথা বলো তো ।
-- কি ?
-- স্বপ্ন দেখা কি অন্যায় ? স্বপ্ন দেখলে কি সেই স্বপ্ন সবসময় কষ্ট ডেকে আনে ?
-- স্বপ্ন কারো সাথে বেঈমানি করে না, বেঈমানি ত করে সেই স্বপ্ন দেখানো মানুষগুলো । তাই এখানে স্বপ্ন হচ্ছে নির্দোষ ।
-- তুমি তো জানো মায়াবতী যাত্রা দলের নাচনী ওয়ালী । নাচ দেখিয়ে তার জীবন চলে । এখন সে যদি তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে চায় তবে সেটা কি তার জন্য ভুল হবে ?
-- কিন্তু সে তো আমাকে চেনে না ।
-- সে তোমাকে দেখেছে । এখন বলো তুমি কি এক যাত্রা দলের নাচনী ওয়ালী কে নিয়ে তোমার সেই কাশফুল এর মাঝে ঘর বানাবে ?
-- হয়তো বানতে চাই ।
-- ভেবে বলছো তুমি ?
-- আমি অশিক্ষিত গরিব মানুষ, আমার আবার ভাবনা চিন্তা কিসের ?
-- তবুও মনের একটা অনুভূতি আছে ।
-- আগে তার সাথে কথা বলি ।
-- তোমার তো তার সাথে কথা বলা হয়ে গেছে ।
-- মানে কি ?
-- আমি সেই যাত্রা দলের নাচনী ওয়ালী মায়াবতী যার ডাক নাম পাপড়ি ।


পর্ব (০৩)
এই বছরের সেরা রোমান্টিক প্রেমের গল্প "মায়াবতী" @অদৃশ্য কাব্য


-- আমি জানি নিজের পরিচয় লুকিয়ে তোমারই সাথে তোমার মনের কথা জানা ঠিক না । কিন্তু মাঝি তুমি তো জানোনা, তোমার চোখের মায়া অনেক অনেক গভীর ভালবাসা প্রকাশ করে ।
-- আমি চুপচাপ হয়ে আছি, তাই খানিকটা সময় পরে আবারও বলা শুরু করলো ।
-- আমার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার মধ্যে, আমি এখন পৃথিবীতে তোমার মত একা । মা বেচে ছিল তিনি বছর দুই আগে মা-রা গেছে তবে মা ও সেই সময় এই যাত্রা দলের সদস্য ছিল ।
আমি আমার বাবা কে কখনো চোখে দিখি নাই তাই তার কথা মনে নেই । আমাদের যাত্রা দলের নাম **কোমলতার ছায়া** । বহু বছর আগে এই যাত্রা দলের একটা অভিনেতার সাথে মায়ের পরিচয় হয় । 
তখন যাত্রা দলের এরা বাগেরহাট গেছিলো । আমার মা'কে বাব পছন্দ করে বিয়ে করার কথা বলে এবং মা ও বাবাকে পছন্দ করে ।
কিন্তু আমার নানা নানিরা কেউ এই বিয়ে মেনে নেয় নি তাই তারা আর মেয়ে জামাইর খবর রাখেননি । 
সেই থেকে মা-বাবা এই যাত্রা দলের সাথে ছিল কিন্তু বিয়ের তিন বছর পরে হঠাৎ করে বাবা উদাও হয়ে গেল । আমি তখন মায়ের গর্ভে ছিলাম, সেজন্য একা একা মা অনেক কষ্ট করলো ।
আমাদের এই যাত্রা দলের মধ্যে একটা বুড়ো দাদু ছিল তিনিও মা-রা গেছে ৫--৬ বছর আগে । 
আমাকে পেটে নিয়ে মা যখন বিপদের মধ্যে পরে গেল তখন তিনি মায়ের দায়িত্ব নিলেন । 
এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আমার সেবা করে কাটিয়ে গেল ।
আমার এই ২২ বছরের জীবনে আমি বাংলাদেশের আনাচে কানাচে প্রায় অনেক যায়গা গেছি । 
সবাই তো আমাকে **কোমলতার ছায়া** যাত্রা দলের নাচনী ওয়ালী মায়াবতী বলে চেনে ।
এ জীবনে কাউকে কখনো ভালবাসতে ইচ্ছে করেনি মাঝি,, কিন্তু গতকাল রাতে তোমার সাথে কাটানো সময় টা আমি ভুলতে পারছি না । সারাদিন নিজের তাঁবুর মধ্যে সুয়ে সুয়ে তোমার কথা চিন্তা করছি । শুধু স্বপ্ন দেখছি, আমার যদি এই উজান চরে জন্ম হতো তবে আরো আগে তোমার সাথে দেখা হতো । যদি দুজন দুজনের মধ্যে ভালবাসা হয়ে যেত হয়তো এতদিনে বিয়ে করে সংসার করতাম ।
কিন্তু এখন সেই স্বপ্ন হতে আমি অনেক অনেক দুরে আছি । প্রতিটি মানুষ স্বপ্ন দেখে, কারো স্বপ্ন সত্য হয়, কারোটা হয়না । কিন্তু যখন এটা এমনি এমনি ভেঙ্গে যায়, তখন বেশী কষ্ট হয় না । কিন্তু যখন খুব কাছের মানুষ স্বপ্ন ভেঙ্গে দেয়, আর তখন নিজেকে সান্তনা দেওয়ার ভাষা খুজে পাওয়া যায় না । তাই আর তো ভালবাসার ইচ্ছে করছে না তবুও মনটাকে বেধে রাখা যায় না ।
আচ্ছা মাঝি তোমার বয়স কত ?
-- ২৬ বছর চলছে ।
-- এতবড় জীবনে কাউকে ভালবাসোনি কেন ? ঐ চরের মধ্যে কি সুন্দরী রূপবতী মেয়ে নেই ?
-- আছে ।
-- তাহলে ?
-- ভালবাসতে ইচ্ছে করেনি আমার ।
-- বাহহহ চমৎকার ।
-- হ্যা, বেশীরভাগ মানুষই নিজেকে দুঃখী ভাবতে পছন্দকরে । যা কিছু মানুষকে কষ্ট দেয়, মানুষ তার পিছনেই ছুটে । যে তাকে ভালোবাসে মানুষ তাকেই এড়িয়ে চলে এবং যে তাকে এড়িয়ে চলে তাকেই কাছে পেতে চায় কারণ মানুষ মনে হয় কষ্ট পেতে প্রচুর ভালোবাসে ।
-- তারমানে তুমি কি কাউকে এড়িয়ে ছিলে ?
-- ঠিক তা নয় ।
-- তাহলে ?
-- আপনার নানা বাড়ির কারো সাথে আর দেখা করেন নি ?
-- না আমি সুযোগ পাই নাই ।
-- ওহহহ ।
-- আমি এখন চলে যাব মাঝি, তুমি নৌকা ঘাটের কাছে নিয়ে চলো ।
-- আরেকটু থাকবেন না ?
-- এমনিতে সময় নেই , আর তাছাড়া থেকে কি লাভ বলো মাঝি ?
-- আমি কথনও পরাজিত হয় নি কারো কাছে তবে
আজ আমি পরাজিত হলাম সত্যি সত্যি ভালবেসে । নিজের অনুভূতি কিভাবে প্রকাশ করে সেটা আমার জানা নেই কিন্তু সরাসরি বলার ও সাহস নেই ।
-- সরাসরি বললে কি হবে ?
-- যদি ফিরিয়ে দেন ?
-- হ্যা মাঝি, আমি তোমাকে ফিরিয়ে দেব । আমার সাথে জড়িয়ে তোমার জীবন মানসিক কষ্টের মাঝে জর্জরিত করতে চাই না ।
-- কষ্ট কেন হবে ?
-- আমার সাথে সংসার করে তুমি মনের সুখ পাবে কিন্তু বাহিরের দুনিয়ায় কি জবাব দেবে ?
-- কিসের ?
-- তুমি কি বোকা নাকি মাঝি ? তোমার গ্রামের মধ্যে যদি আমাকে বিয়ে করে নিয়ে যাও তবে তো সবাই চিনবে আমাকে । সবাই বলবে, ঐ যে যাত্রা দলের নাচনী ওয়ালী মায়াবতী ফুলমাঝির বউ । 
তখন আমার চেয়ে তুমি বেশি কষ্ট পাবে ।
-- নাচনী ওয়ালীরা কি সংসার করতে পারে না ?
-- না পারে না ।
-- এটা কি আপনার নিজের কথা ?
-- না মাঝি এটা বাস্তবতা ।
-- যদি মনকে শক্ত করি ?
-- পৃথিবীতে সবচেয়ে নরম জিনিসকি জানো ? মানুষের মন ! যাকে কোন কঠিন বস্তু দিয়ে আঘাত করতে হয় না । দুঃখের পরশ পেলে এমনিই ভেঙ্গে টুকরো হয়ে যায় ।
-- এমন ভাবেদুরে সরিয়ে দিবেন না ,পরে মিস করতে হয় । এমন কস্ট দিবেন না যেন পরে চোখের
জল ফেলতে হয় ।
-- মাঝি একটা কথা বলি, যখনই বৃষ্টি পরে, আমি তখনই বৃস্টিতে ভিজেছি আর মন খুলে কেদেছি । কেউ বুজতেই পারেনি যে আমার চোখ থেকে গরিয়ে
পরেছে বৃস্টির জল নাকি চোখের জল ? তাই তো বৃস্টি এলেই আমি নিজেকে ভাসিয়ে দেই বৃস্টির জলে ।
-- আমি সবসময় একা একা থাকতে পছন্দ করি তাই কাশফুলের মাঝে ঘর বানিয়েছি । অতিরিক্ত মন খারাপ হলে মানুষ একেবারে নীরব নিথর হয়ে যায় ।
একা থাকতে ভালোবাসে কারণ তখন তার সমস্যাকে নিজের মত করে কেউ দেখে না । কিংবা মূল্যায়ন করে না । তাই মন খারাপের বেলায় একাকীত্বই হয় মানুষের একমাত্র সঙ্গী । আমি আমার সেই একাকীত্ব কে দুর করে দিয়ে আপনার সাথে মধ্যেরাতে খোলা আকাশের নিচে জোৎস্না দেখতে চাই ।
-- মাঝি, আমার এই বসবাস করে একাকিনী কিছু রাত কেটে যায় স্বপ্ন বিহীন । আবার নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ কিছু আশা ভেঙ্গে যায় নীরবে জোনাকির স্রোতে । আর নিজের একান্ত কিছু ভালো লাগা মুহূর্তের স্মৃতি কাঁদিয়ে যায় আড়ালে । কিংবা কিছু মানুষ দুরে ঠেলে হারায় কিছু না বলে শুধু কষ্টের বোঝা নিয়ে !
-- আমি শুধু নিজের সুখের জন্য ভালবাসতে চাই না । আপনারও প্রতিটি মুহূর্তের সুখের কারণ হতে চাই আমি ।
-- তুমি কি পারবে মাঝি ?
-- হয়তো পারবো ।
-- তুমি হয়তো জানোনা মাঝি, তবে সুখ বড় নিষ্ঠুর সে তো আমায় বোঝেনা । বারবার মনে হয় কাছে এসে উঁকি দেয় ধরা যায় না তাকে । জীবনে সুখ নামের নদীতে পাইনি কোন কূল কিনারা । আজ মনে হয় সুখের আশায় বেঁচে থাকাই বড় ভুল হবে । তাই আফসোস করি না মাঝি ।
-- একটা সুযোগ চাই মায়াবতী ।
-- যদি সুযোগ পাও খুব আদর করবে ?
-- হ্যা খুব ।
-- এখন যদি তোমার পাশে গিয়ে শরীরের সাথে ঘেঁষে বসে বসে জোৎস্না দেখি তুমি কি খুব বেশি রাগ করবে ?
-- রাগ কেন করবো ?
-- তাহলে আসতে বলছো ?
-- হ্যা ।
-- মনে রেখো মাঝি, আমার উপস্থিতি হয় যদি তোমার
সুখের কারণ, কথা দিলাম হয়ে যাবে আর তোমার স্নিগ্ধ সীমানায় আমার আগমন । সাজিয়ে নিও নিজের
মতো তোমার আঙিনায়, করবো তোমায় জ্বালাতন সর্বদা হৃদয়ে স্পন্দনে !
-- মায়াবতী আমার পাশে বসে আমাকে বললো, একটা গান শোনাবে মাঝি ?
-- আমি বরলাম, আমি তো গান জানিনা তবে কবিতা জানি ৷।
-- তাহলে শুনাও একটা কবিতা ।
-- আচ্ছা ঠিক আছে,
এই বছরের সেরা রোমান্টিক প্রেমের গল্প "মায়াবতী" @অদৃশ্য কাব্য


**★হৃদয়ে_তোমার_বসবাস ★**।
আমার আকাশ ছোঁয়া গল্প
আমি চাইনা হতে কারো
আমার দুচোখ ভরা স্বপ্ন
চাইলে নিয়েও নিতে পারো।
আমার সুখ গুলো সব নদী
স্বচ্ছ শীতল জলের খেলা
তুমি পা ডুবাতে যদি
কখন কেটেই যেত বেলা !
আমার অদ্ভুত সব চাওয়া
আমার মাতাল ছুটোছুটি
চাইলে নিয়েও নিতে পারো
আমার অবাক চক্ষু দুটি।
আমার সবুজ ভালোবাসা
আমার অবুঝ অভিমান
তুমি নিয়েই নিতে পারো
আছে সাগর পরিমান !
আমার বুক ভরা বাতাসে
আমি সুখের অভিলাষী
ভালোবেসোনা গো আমাকে
ভালোবাসো আমার বাঁশী ।


শেষ পর্ব 
এই বছরের সেরা রোমান্টিক প্রেমের গল্প "মায়াবতী" @অদৃশ্য কাব্য
-- মাঝি নৌকা ঘাটের কাছে নিয়ে চলো আমার যে যেতে হবে এবার । (মায়াবতী)
-- কালকে আবার আসবেন তো ? (আমি)
-- হ্যা আসবো ।
-- তাহলে চলেন ।
-- যদি না আসি তবে কি অপেক্ষা করবে ?
-- হ্যা করবো ।
-- বেশি ভালোবাসিও না মাঝি, পরে যখন হঠাৎ করে হারিয়ে যাবো তখন সইতে পারবে না ।
-- হারাবে কেন ?
-- প্রকৃতির টানে ।
-- ভালো কথা, তাহলে আর আসতে হবে না ।
-- এই বেলা অভিমান করে নাও, ওই বেলা আমি যদি না থাকি তবে তো আফসোস করবে ।
-- একলা আমি বড় একলা সময় আধার যেনো এই মনের শহরে বৃষ্টি ঝরে । এই হৃদয় জুরে সারা রাত সারা দিন আর প্রতিটি প্রহর । মায়াবতী তুমি আমার হৃদয়ে স্পন্দনে অনুভবে প্রখর ।
-- সত্যি করে বলো মাঝি, আমার নিভে যাওয়া প্রদীপ তুমি পারবে কি জ্বালাতে ! আমার ভুলে যাওয়া স্বপ্ন কি দেখাতে পারবে ! আমার হৃদয়ের গোপন কথা তুমি পারবে কি শুনতে ! ভেঙ্গে যাওয়া জীবন আমার তুমি পারবে কি গড়তে !
-- হয়তো তোমাকে টাকা পয়সার সুখ দিতে পারবো না কিন্তু মনের সুখ দিতে পারবো ।
-- সেটাই আমার চাওয়া । কিন্তু মাঝি কেউ চায় না কাউকে ভুলতে , কিন্তু সময় ভুলিয়ে দেয় । কেউ চায় না কাউকে হারাতে কিন্তু সময় আর ভাগ্য তাকে
ছিনিয়ে নেয় । এই হল বাস্তব পৃথিবীতে যা চাইতা পেতে তাকে পেতে গিয়ে হারাই । হঠাৎ করেই হোক কিংবা জানান দিয়ে হোক আমার অস্তিত্ব খুঁজে পাবে সারাক্ষণ ।
-- আপনি হচ্ছেন মায়াবতী, হয়তো সারা জীবন আপনাকে না দেখে, কথা না বলে থাকতে পারবো ।
কিন্তু আপনার কথা চিন্তা না করে কোনো মুহূর্ত মনে হয় থাকতে পারবো না ।
-- এখন আর মায়াবী ভালবাসার কথা আমাকে তো সম্মোহন করে না । কারণ নরম কাঁদা একবার পুরে যদি ইট হয়ে যায় এরপর যতই পানি ঢালা হোক না কেন তা আর গলেনা । বরং ভারি ও শক্তিশালী হয় ।
মানুষের মনও ঠিক এ রকম, একবার কষ্ট পেলে এরপর শত আবেগেও তার কোন পরিবর্তন হয় না !
-- তাহলে কি আমি ভুল করছি মায়াবতী ?
-- তুমি তোমার যায়গা হতে সঠিক, আর আমি তো আমার যায়গা থেকে সঠিক । তবে দুজনের মধ্যে ভালবাসা অবিরাম অন্তহীন এক শীতল কণ্ঠে পাল্টা শত বসন্তের ভোরে ৷
-- আমি চুপচাপ ৷
-- এখন আর স্বপ্ন আঁকি না দুচোখের কোণে নেই কোন আশা আজ আমার হৃদয়ের ঘরে । এখন আর অশ্রু ঝোড়ে পরে না দুচোখ বেয়ে কারণ অনেক ছবি আঁকা ছিল স্মৃতির দেয়ালে । আজ তার সবটুকুই যে মুছে গেছে শুধু বাস্তবতার ভিরে ।
-- চাইলে তুমি হারিয়ে যাও রাজা হীন কোন রাজ্যে জনশ্যূন কোন রাজ্যে ..!
আমি আর কোন কথা বললাম না, সেও কোন কথা বললো না । খোলা আকাশের নিচে দুর আকাশে চন্দ্র দেখে তার জোৎস্নার আলো মেখে মুখরিত মন । সে আমার শরীরের সাথে মিশে বসে আছে । আমার তো একবার মনে হলো তার গালের কোণে চোখ বেয়ে পরা অশ্রু মুছে দিতে । তার গরম নিশ্বাসের সামনে নিজের চোখ দুটো তার চোখের পরে রেখে এই চাঁদের আলোয় তাকিয়ে থাকতে ৷
নিশি রাত বাঁকা চাঁদ আকাশে চুপি চুপি বাঁশি বাজে বাতাস্‌ বাতাসে নিশি রাত । বাঁকা চাঁদ আকাশে চুপি চুপি বাঁশি বাজে বাতাসে । এ জীবনে যতটুকো চেয়েছি মন বলে তার বেশি পেয়েছি,।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে মেঘ হয়ে ভেসে যাই আকাশে। চলে যাই ইচ্ছে মত এদিক কিংবা ওদিক । দমকা বাতাসে ভর করে, রংধনুকে সাথী করে চলে যাই দিগন্তের ওপাশে । সাগরের ওপর দিয়ে উড়ে গিয়ে দেখে আসি কেমন করে সাগরের নীল জলকে আলিঙ্গন করে রাতের আকাশ ।
লক্ষ কোটি তারার ঝাঁক কি এত গল্প করে সারা রাত ? সমুদ্রের মাঝে ছোট্ট দ্বীপ কুমারীর চরণে সাগরের জল ভালবেসে চুমু খেয়ে কি অস্ফুটে বলে ভালবাসি ।
এই বছরের সেরা রোমান্টিক প্রেমের গল্প "মায়াবতী" @অদৃশ্য কাব্য


★★
নৌকা ঘাটে ভেরালাম, মায়াবতী খুবই সাবধানে পথ চলে তীরে উঠে গেল । অন্ধকারে চাঁদের আলোয় সামান্য ছায়া দেখা যায় । তীরে উঠে আমার দিকে তাকিয়ে বললো ;-
-- মাঝি তাড়াতাড়ি বাসায় যাও, আরেকটা কথা বলি মাঝি । আমাকে নিয়ে খুব বড় ধরনের স্বপ্ন দেখে নিজের কষ্ট বাড়িও না । যখন হঠাৎ করে হারিয়ে যাব তখন হয়তো সহ্য করতে পারবে না । তবে মাঝি আমি ধন্য হয়েছি কারণ, কোন এক সবুজ পাতার ঝিরিঝিরি বাতাসের কাছে কাশফুলের মাঝি আমায় ভালবাসে । এই কি কম সৌভাগ্য আমার ?
সত্যি কথা কি জানো মাঝি ? আমি সবার কাছে আনন্দের পাত্রী, ভোগের পণ্য কিন্তু কারো সাথে এক সাথে থাকার জন্য নয় । তবে তোমার জন্য ভালবাসা বাচিয়ে রাখবো আমি আমার মনের নীড়ে । যেখানে থাকি সারাজীবন তোমার কথা মনে থাকবে আমার । আর সৃষ্টিকর্তা যদি তোমার আমার মিলন লিখে রাখে তবে অবশ্যই তোমাকে নিয়ে পূর্নিমার রাতে দুজনেই পাশাপাশি বসে জোৎস্না দেখবো ।
আসি মাঝি, আবার দেখা হবে ।
-- আমি বললাম, আপনি কি আর দেখা করতে চান না আমার সাথে ?
-- সে বললো ;- চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয় বিচ্ছেদ নয় চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন করা । আর্দ্র রজনী চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে আমার না-থাকা জুড়ে । জানি চরম সত্যের কাছে নত হতে হয় সবাইকে কারণ জীবন সুন্দর । আকাশ-বাতাস পাহাড়-সমুদ্র সবুজ বনানী ঘেরা প্রকৃতি সুন্দর । আর সবচেয়ে সুন্দর এই বেঁচে থাকা তবুও কি আজীবন বেঁচে থাকা যায় !
-- আমি বললাম ;- আরেকটু কাছে আসতে চাই তোমার, আরও কাছে;নিশ্বাস ছোঁয়া দূরত্বে তাকাতে চাই তোমার চোখে । আমি কি আছি ?চোখের তারায় মুগ্ধতার আবেশে । তোমার হৃদয় মণিকোঠায় আঁকা আছে কি-আমার অবয়ব ! হৃদয় বর্ণালীর আস্তরণের তুলিতে।তোমাকে বুঝতে চাই, হৃদয়ের সবটুকু নিয়ে উষ্ণতা দিয়ে,অনুধাবন করতে চাই, ভালবাসার মর্মার্থ ঐ চোখে চেয়ে । তোমার গভীর কালো মায়া মায়া চোখে হারিয়ে গেছি, প্রেমে পড়ে গেছি একেবারে- কাছে পাবার ব্যাকুলতায় ।
-- আগামীকাল রাতে আবারও সেই মিষ্টির দোকানে অপেক্ষা করবে ।
আর কিছু না বলে মায়াবতী পিছনে ফিরে অন্ধকারে হাঁটা শুরু করলো । আমি কিছুক্ষন তাকিয়ে দেখি তারপর নৌকা নিয়ে বৈঠা হাতে ঘুরে ফিরে যাচ্ছি আমার উজান চরে কাশফুলের মাঝে ।
এই বছরের সেরা রোমান্টিক প্রেমের গল্প "মায়াবতী" @অদৃশ্য কাব্য


★★★
পরেরদিন বিকেলে গ্রামের মধ্যে বাড়িতে সুয়ে আছি তখনই পাখি আমার বাসায় উপস্থিত । সন্ধ্যা হতে এখনো অনেক বাকি আছে কিন্তু পাখির দিকে চেয়ে মনে হচ্ছে সে যাত্রা দেখতে যাবার জন্য প্রস্তুত ।
গোলাপি রঙের শাড়ি পরে চুলে বেনী কেটেছে, চোখে কাজলের পরিমাণ বেশি হয়ে গেছে । হাতে সস্তা কিছু চুড়ি পরেছে, আমার স্পষ্ট মনে আছে এই চুড়িগুলো আমি কিনে দিয়েছিলাম । কোমড়ের কাছে পেট কিছু টা দেখা যাচ্ছে যেটা শাড়ির আঁচল দিয়ে পেঁচানো ।
-- মাঝি যাইবানা যাত্রা দেখতে ? (পাখি)
-- হহ যামু কিন্তু যাত্রা তো সেই সন্ধ্যার পরে আরম্ভ হইবো, এত তাড়াতাড়ি গিয়ে কি করবো ? (আমি)
-- সুরভি ভাবি কইলো রাইতের বেলা নাকি বেশি ভির হবে । তখন গেলে সামনে যায়গা পাওয়া যায় না তাই পিছনে দাঁড়িয়ে দেখতে হয় । কিন্তু পিছনে সিট থাকে না আর ভালো করে নাকি দেখা যায় না ।
-- হুম তা ঠিক ।
-- তাহলে চলনা মাঝি, এখনই রওনা হয়ে যা-ই ।
-- আচ্ছা তুই বস আমি তৈরি হচ্ছি ।
-- মাঝি হুনো ।
-- কি ?
-- নীল রঙের তোমার একটা শাট আছে না ? ঐটা পরে বাইর হবা ঠিক আছে ?
-- কেন ?
-- আমার খুব পছন্দ তাই ।
-- আর কি কি পছন্দ তোর ?
-- রাগ করলা মাঝি ?
-- না । তুই বস আমি আসতেছি ।
এই বছরের সেরা রোমান্টিক প্রেমের গল্প "মায়াবতী" @অদৃশ্য কাব্য


★★
হেমন্তের গাঙচিলের ঝাঁকের দলে কাশফুল শেষ প্রান্তে আবাবিল । আকাশে সাধা মেঘের ভেলা চলে যায় বসন্তের মত সুদূর অতীতের তলহীনে । পড়ন্ত গোধূলির অমলিন বেলায় মৃদু ঢেউ আর বাতাসের কাছে নৌকা হটিয়ে দিলাম ।
চুক চুক মৃদু শব্দের মাঝে পারি দিয়ে যাচ্ছি আমরা এ মেঘনা নদীর তীর । ছোট বড় হরেক রকমের বস্তু নৌকা দেখা যাচ্ছে নদীর ওপাড়ে এপাড়ে । বিহঙ্গের ডানা মেলে উড়ে যায় মেঘের আকাশ ছুয়ে মিলিয়ে জমিন আসমানের মাঝে ।
-- মাঝি ? (পাখি)
-- কি ? (আমি)
-- কবিতা লেখা কেমন চলছে ?
-- ভালোই চলে ।
-- আমারে একটা প্রেমের কবিতা শোনাবে ?
-- তুই হলি আমার শিক্ষক, তোর কাছে কবিতা বলে লজ্জিত হতে চাই না ।
-- এমন ভাব করো মনে হয় আগে কবিতা বলোনি কখনো ?
-- যতবারই বলেছি ততবারই ভুল ধরেছিস ।
-- শিক্ষকের কাজ হচ্ছে ভুল ধরা ।
-- বুঝতে পারছি ।
-- তাহলে বলোনা মাঝি ।
-- আচ্ছা ঠিক আছে , কিন্তু যদি ভুল ধরো তবে আর কোনদিন বলবো না ।
-- হুম ।
ভালোবাসার গান
ওগো প্রিয়া তুমি এখনো কি ভাব
তোমার কাছে আমি আছি কি বা নাই ?
তুমি কি জানো তোমার জন্য
আজও ভালবেসে ডুবে ডুবে যাই ।
আমার জন্য তুমি এখনো কি নীল ?
সাজো নাকি আকাশের সাথে ?
দুরে ঐ ডানা মেলা বাহু
বিহঙ্গের ডানা উড়ো তার হতে ?
আমি এখনো যে তোমার
সেই মুক্ত বিকেলের রোদ,
আমি তো জানালার পাশে
একাকী রোজ লই প্রতিশোধ ।
হয়তো তুমি দেখেও দেখনা
আচ্ছা নাকি ভাল বাসোনা ?
তবে একবার তুমি আমার
কাছে কেন আসনা ?
প্রিয় তুমি এখনো কি আমার
আছো কি বা নাই ?
জানো কি তোমার জন্য আজো
আমি ডুবে ডুবে যাই ।
এই বছরের সেরা রোমান্টিক প্রেমের গল্প "মায়াবতী" @অদৃশ্য কাব্য


★★★
সত্যি সত্যি আমরা যাত্রা দেখতে একদম মঞ্চেরই সামনে গিয়ে বসলাম । যথাসময়ে যাত্রার প্রথম নাট্য উৎসব শুরু হলো তারপর বক্তৃতা । পাখির দিকে তাকিয়ে দেখি সে অপলক নয়নে তাকিয়ে আছে । আমরা গ্রামের মানুষের এই একটাই বৈশিষ্ট্য হলো, আমরা শহরের মত ওতো স্মার্ট না ।
নাটকের মাঝে বিরতিতে মায়াবতী নাচার জন্য উঠলো । নাচের মাঝেই মায়াবতী আমাকে দেখতে পাচ্ছে সেটা আমি বুঝতে পারছি । কারণ সে বারবার আমাকে দেখছিল ।
প্রথম নাচের পরে মায়াবতী কে আর মঞ্চে দেখা গেল না । অন্য অন্য মেয়েরা নাচলো কিন্তু মায়াবতী আর আসলো না ।
মধ্যে রাতে যখন অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেল তখন আমি আর পাখি বেরিয়ে পড়লাম । ঘাটের কাছে অনেক গুলো গ্রামের মানুষ আছে তাদের সাথে পাখিকে বসিয়ে রেখে অপেক্ষা করতে বলে আমি মিষ্টির দোকানে গেলাম ।
অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে আছি কিন্তু মায়াবতী এখনো আসছে না । ওদিকে সবাই কে নৌকার মধ্যে বসিয়ে রেখে আসলাম । একবার ভাবি চলে যাব তবু আবারও দাঁড়িয়ে যাই কোন একটা মায়ার টানে ।
কিন্তু আমার অপেক্ষার অবসান ঘটে না ।
-- হটাৎ করে একটা ছেলে এসে আমাকে বললো, আপনি কি পাপড়ি আপার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন ?
-- আমি বললাম, হ্যা ।
-- সে বললো, পাপড়ি আপা আসতে পারবে না তাই
আপনি চলে যেতে পারেন । পাপড়ি আপা আপনার জন্য একটা চিঠি লিখে দিছে ।
-- কোই দেখি ?
ছেলেটা আমার কাছে চিঠি দিয়ে সামনের দিকে চলে গেল, আর আমি চিঠি খুলে পড়া শুরু করলাম ।
মাঝি,
তোমার স্ত্রী দেখতে অনেক সুন্দর । দোয়া করি দুজনে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারো জগতের মাঝে । নিজের অনুভূতি আর ভালবাসা গুলো বউকে দিও তাহলে সুখ বৃদ্ধি পাবে । 
আমার জন্য আর কখনো অপেক্ষা করিও না কারণ সেটা বৃথা হবে ।
ইতি
মায়াবতী ।


সম্পূর্ণ গল্প'টি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ধন্যবাদান্তেঃ------
মওদুদ আহমেদ মধু (মিঃ মধু)
@অদৃশ্য কাব্য
#_দৃশ্যমান_জীবনের_অদৃশ্য_কাব্য✅






No comments

Powered by Blogger.