Ads

নারীর মন বোঝার একশত একটি উপায় । @মিঃ মধু

নারীর মন বোঝার একশত একটি উপায় ।  @অদৃশ্য কাব্য
 নারীর মন বোঝার একশত একটি উপায়,

কালাম সাহেবের বাড়ির সামনে এক জুতা হাতে নিয়ে এক অবলা পুরুষের মতো দাড়িয়ে আছি। স্যান্ডেল বা চটি নয় কারন জুতা গুলো ছিড়ে ছিড়ে স্যান্ডেল হয়ে গেছে। স্যান্ডেল গুলো ছিড়ে ছিড়ে চটি হয়ে যায়। আর চটি গুলো ছিড়ে একদিন মানিব্যাগ হয়ে যায়।আর মানিকব্যাগ গুলো হয় সুখ জমানোর ভালো বলা চলে উত্তম পাত্র। জুতার সোল থেকে বানানো মানিব্যাগ। সুখ চুইয়ে পড়ার উপায় নেই।খালি মানিব্যাগে থাকে না দেখা সুখ। সুখ কোনদিন দেখা যায়? যায় না। তাই মানিব্যাগের অদৃশ্য সুখ আছে বলে ধরে নেই। সুতরাং আমার হাতে একটা জুতা থেকে রুপান্তরিত হওয়া স্যান্ডেল আছে।

সূচীপত্রঃ-

নারীর মন বোঝার একশত একটি উপায়
আপনজন
একটি কালো মেয়ে চাই
এক ডিভোর্সি নারীর বাস্তব জীবনী
চারিদিকে শুন্যতা আর শুন্যতা

কালাম সাহেবের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে প্রত্যেকবার ভাবতে হয় কয়েকবার। বাড়ির সামনে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর দেখলাম পিছন থেকে কিদ্দিস মিয়া দুই হাতে দুটি বাজারের ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে আসছে। আমার সামনে এসে হাপাচ্ছে। কিদ্দিস মিয়া বুকের উপর হাত দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, " হাহ হাহ হাহ। কচম বাই। আপনে আইসেন। মেলাদিন পর। হাহ হা হাহ। আপনে জানেন নাহ, হাহহ হাহ হাহ। আপনেরে কতোদিন খুজছি। গুলিস্তানের মোড়ে গিয়া পোস্টার নিয়া দাঁড়ায় ছিলাম মেলা দিন। আপনার সংবাদ পাই নাই। হাহ হাহ হহহহ। " আমি কিদ্দিস মিয়ার কাধেঁ হাত দিয়ে তাকে শান্ত করলাম।

" কিদ্দিস ভাই শান্ত হন। ধীরে ধীরে বলেন কি সমস্যা?
আমাকে এতো খোজাঁর কারন কি? "

" আরেহ ভাই বইলেন না। সেডা হিস্টুরি। এখন চলেন চলেন ভেতরে যাইবেন চলেন "
 
নারীর মন বোঝার একশত একটি উপায় । @অদৃশ্য কাব্য
কালাম সাহেব বাড়ির ছ'তলায় থাকেন। বাড়ি ওয়ালারা সাধারনত ছ'তলায় থাকে না। যারা থাকে তারা পাগলা মানুষ।পাগলাটে বাড়ি ওয়ালা। নয়তো লোভী। দো'তলা বেশিতে ভাড়া দেয়ার জন্য নিজে ছ'তলায় থাকে। তবে কালাম সাহেব তেমন পাগলা বা লোভী নন। তিনি মন থেকে কবি। কিছু মানুষ উপরে কবি-দেহে কবি। তাদের দেখলেই চেনা যায়। দূর থেকে দেখলেই চিৎকার দিয়ে বলতে হয়, " ওইযে ভাবি কবি আসে। কবি কবি ভাব শুধু কবিতার অভাব। ব্যাপার না চেহায় তো কবিতা ভাসে। সেটা দিয়েই চলবে। "। আর কিছু মানুষ থাকে মন থেকে কবি। তাদের দেখলে চেনা যায় না, বোঝা যায় না। কেউ যদি কোনদিন জেনেও যায় তারা কবি তবে মুখে একটা বিশাল ভেংচি কেটে বলে, " ধুর মিয়া আপনে কবি? ঠাট্টা করেন? মুখ দেইখা মনে হয় চোর। মেলা চুরি করার অভিজ্ঞতা আসে আপনের। যাই হোক কবি যখন হইয়াই গেসেন কি আর করবেন। এখন চুল-বাল বড় করেন। দাড়ি রাখবেন রবীন্দ্রনাথের অর্ধেক। ছিড়া সেন্ডেল পড়বেন। আধোয়া পাঞ্জাবী পড়বেন।আর দামী সিগারেট খাইবেন না। বিড়ি খাইবেন। দামী সিগারেট খাইবেন কেউ গিফট করলে। মাসে একবার গঞ্জিকা খাইয়া টাল হইবেন। আবোল তাবোল কবিতা লিখবেন। আর মাসে মাসে একটা কইরা প্রেমিকা পাল্টাইবেন। তইলেন চলবে" । কবির প্রতি মানুষের এই চাহিদা ভাব মূর্তি দেখে সদ্য কবিতা লিখতে যাওয়া নতুন কবি বেশ চিন্তায় পড়ে। কেউ কেউ থুতনীতে হাত দিয়ে দাড়ি না পেয়ে মূর্ছা যায়। তবে কালাম সাহেব এসব কবি কবি চেহারা নিয়ে ভাবেন না। মন থেকে কবি হয়েছেন তাই নিজের বাড়ির ছ'তলায় থাকেন। ফ্ল্যাটের উত্তর দিকের এক দেয়াল ভেঙ্গে সেখানে কাচেঁর বিশাল জানালা লাগিয়েছেন। তার মতে সকাল সকাল সূর্যকে মন ভরে না দেখলে শক্তি পাওয়া যায় না। নিজেকে মৃত লাগে। মনে হয় অন্ধকার এক কবরে আছি।

বাসায় ঢুকতেই দেখি কালাম সাহেব জানালার পাশে বসে বই পড়তে ব্যাস্ত। খুব মনযোগ দিয়ে পড়ছেন তিনি। চোখের চশমা নাকের কাছে চলে এসেছে সেদিকে তার খেয়াল নেই। আমি তার পাশে গিয়ে একটা চেয়ার নিয়ে বসলাম। তাকে ডাকলাম, " কালাম সাহেব "। কালাম সাহেব মুখ ঘুরিয়ে এমন ভাবে তাকালেন যেনো আজ আমাকে প্রথম দেখেছেন। এরপর বললেন,

" আরেহ চমক তুমি? "

" সেদিন আপনার মতো একটা লোককে দেখে আপনার কথা মনে পড়লো। শুনেছি হঠাৎ করে কোন ব্যাক্তির কথা মনে পড়লে হতে পারে সে ব্যাক্তি মারা গেছে। তাই ভাবলাম আপনার ছেলেকে এসে শান্তনা দিয়ে যাই "

" বাহ! কি সুন্দর ভাবে আমাকে আমার মৃত্যু সংবাদ দিচ্ছো "

আমি তখন হাতের বইটার দিকে চোখ দিয়েছি। বেশ চমৎকার বই মনে হচ্ছে সেটাকে। যে দু পৃষ্ঠা কালাম সাহেব খুলে রেখেছেন তাতে দুটো সুন্দর সুন্দর বান্দরের ছবি আটা। আমি কালাম সাহেবর দিকে তাকিয়ে বললাম,

" কি বই পড়ছেন? "

" বান্দর পালনের একশত একটি সহজ উপায় "

" এই বই কেনো পড়ছেন? বান্দর পালবেন? "

" না কারন আছে। কিদ্দিস নিশ্চই বলেছে তোমাকে অনেক খোজাঁ খুজিঁ করেছিলাম? "

" হুম বলেছে। কেনো খুজছিলেন? বান্দর কিনতে চান? "

" আরেহ না। প্রেমিকা চাই "

" প্রেমিকা? "

" হুম ভাড়াটে প্রেমিকা "

" প্রেমিকা দিয়ে করবেন? "

" আরেহ প্রেমিকা দিয়ে আর কি করে মানুষ? প্রেম করবো। আর প্রেমের কবিতা লিখবো। 
জানোতো নিঝুমের মা ডাক্তার। সে রাত দিন হাসপাতালে থাকে। প্রেম করার কোন মানুষ নেই। আর ডাক্তারেরা ভালো প্রেম করতে জানে না। ডাক্তার হওয়ার পর নারীরা হৃদয়হীন হয়ে যায়। হৃদয়হীনা নারী নিয়ে বেশ কবিতা লেখা হয়েছে। এখন একটা প্রেমিকা দরকার। 
প্রেম করে কবিতা লেখবো, বলা চলে প্রেমের অভিনয় করবো। 
বেতন ভালো দেবো "
 
নারীর মন বোঝার একশত একটি উপায় ।  @অদৃশ্য কাব্য


" তা বুঝলাম। তো এতোদিনে কোন প্রেমিকা পেয়েছেন? "

" না পাইনি। যা পেয়েছি স্কুল কলেজের মেয়ে। আবেগে ভড়পুর কতোগুলো মাংস পিন্ড। আবেগকেই ওরা প্রেম ভাবে। এসব মেয়েদের জন্য ছেলেরা ভালোবাসার প্রতি তেক্ত হয়ে যাচ্ছে "

" তাহলে এখনো কোন প্রেম করার মতো মেয়ে পাননি? "

" না পাইনি "

" কিন্তু হাতে এই বই কেনো? বান্দর পালনের একশত সহজ উপায়? "

" ও আচ্ছা। তুমি তো জানোই মেয়েদের মন বিধাতা ও বোঝেন না। তো চিন্তা করে দেখলাম বাদর সম্পর্কে ভালো করে জানতে পারলে মেয়েদের মনের সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞ্যান পাওয়া যায়। বাদরের মন বোঝাও কঠিন।তারা এক মূহূর্তে মন পরিবর্তন করতে পারে। তাই বান্দর পালনে বিস্তর জ্ঞ্যান থাকলে নারীর সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে কি কি করা প্রয়োজন তা জানা যায়। তা নিয়ে দুই লাইন কবিতা ও ভেবেছি "

" কি কবিতা শোনান দেখি? "

"বিধাতা একদা করিয়াছিলো এক ভুল,

নারীর মনে বসাইয়া দিলো, বান্দরের এক চুল।

নারীই কি চায় জানেনা নারী,

বিধাতা তুমি বরই আনাড়ি "

" বাহ বেশ সুন্দর । তাহলে আপনার কি এখন ভাড়াটে প্রেমিকা চাই না বান্দর চাই? "

" কোনটা হলে ভালো হয় বুঝছি না "

" বান্দর হলেই ভালো হয়। ধরুন বান্দরের মনের উপর কবিতা বিশ্লেষন লিখে বই বের করবেন। বইয়ের নাম দেবেন নারীর মন বোঝার একশত সহজ উপায়, লেখক কালাম চৌধুরী। বই চলবেও ভালো। নারীর মন বিষয়ে মানুষ নতুনত্ব পাবে "

" তাহলে আমার জন্য একটা বানর জোগাড় করো চমক। খুব বেশী প্রয়োজন "

"যি আচ্ছা । আপনি বসুন আমি নিঝুমের সাথে দেখা করে আসি "
 
নারীর মন বোঝার একশত একটি উপায় ।  @অদৃশ্য কাব্য
নিঝুমের রুমের সামনে দাড়িয়ে শুনলাম সে কম্পিউটারের কি বোর্ডে বেশ ঝড় তুলছে। দরজায় দুটো দিয়ে বললাম, " আপু আসবো? "। ভেতর থেকে কিবোর্ডের যে ঝড় গতির আওয়াজ চলছিলো তা কমে এসেছে। । গম্ভীর গলায় নিঝুম বললো, " ভেতরে আসুন " । ভেতরে গিয়ে নিঝুমের পাশের চেয়ারে হাসি মুখে বসলাম। নিঝুম তখন আমার উপর ক্ষেপে আছে। আমার দিকে লাল ঝাল করে তাকায়,

" আপনি আবার আমাকে আপু ডেকেছেন? "

" আসলে নিঝুম তো মেয়েদের নাম তাই আপু চলে আসে সাথে। "

" আসলেও আর আপু ডাকবেন না। কোথাও লেখা আছে নিঝুম মেয়েদের নাম? "

" না আসলে মেয়েলি ধরনের। তাই ভেবে নেয়া "

" না আপনি আর ভাববেন না। "

" আচ্ছা ঠিকাছে। "

" তো আপনি বাবার মাথায় নতুন কি ভূত ঢুকিয়েছেন? আপনার বুদ্ধিতে সূর্য দেখার জন্য বাবা উত্তরের দেয়াল ভেঙ্গে কাচঁ লাগিয়েছে। আজ কি বুদ্ধি দিয়েছেন? "

" আজ কোন বুদ্ধি দেইনি। সে নিজেই চাইছে বান্দর পালবে "

" বান্দর? "

" হ্যা! নারীর মন বোঝার জন্য বান্দর পালবে। "

" এখানেও নিশ্চই আপনার হাত আছে? "

" না সে আমাকে অনেকদিন খুজছিলো ভাড়াটে প্রেমিকা খুজেঁ দেয়ার জন্য। আজকে আসার পর বললো নারীর মনের সাথে বান্দরের মনের বেশ মিল। বান্দরের মন বুঝলেই নারীর মন বোঝা যায় "

" দেখবেন কিন্তু। এবার যদি উল্টা পাল্টা কিছু হয় তবে আপনাকে জঙ্গী বলে র‍্যাবের কাছে ধরিয়ে দেবো। "

" যি আচ্ছা "

" যি আচ্ছা করবেন না। আপনে এখন যান। আপনার জন্য ব্লগের কমেন্ট করতে দেরী হয়ে যাচ্ছে "

কালাম সাহেবের রুমে ফিরে এসে দেখলাম সে এক নতুন বই ধরেছে, " মন ডাকাতি করার কৌশল "। আমি তার পাশে বসলাম। কালাম সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

" আচ্ছা নিঝুমের কি খবর? ওর সাথে কথা হয় না বেশ কয়েকদিন। "

" খবর ভালো না। সে ব্লগ চালায় "

" ব্লগ চালিয়ে কি হয়? "

" রান্না শেখে "

" রান্না শেখে মানে? "

" জ্বী হ্যা। রান্না শেখে। আজ কালকের মেয়েরা রান্না করতে জানে না। তাই আপনার ছেলে তার প্রেমিকার জন্য ব্লগ দিয়ে রান্না করছে। এখন মেয়েরা প্রেম করার আগে ছেলেদের জিজ্ঞেস করে সে রান্না করতে জানে কিনা। রান্না করতে না জানলে সে ছেলে বাদ "

" কি বলো এসব? আজকের ছেলেদের এই অবস্থা? আমার ছেলে নিঝুম ও এমন করছে? "

" জ্বি হুম "
 
নারীর মন বোঝার একশত একটি উপায় ।  @অদৃশ্য কাব্য


সাথে সাথে কালাম সাহেব উঠে নিঝুমের রুমের দিকে দৌড়ে গেলেন। আমিও তাদের বাসা থেকে রাস্তায় বেরিয়ে এলাম । আজকাল পরিবারের খুব মরচে ধরেছে। ভালোবাসার বন্ধনের মাঝে আজ কিছু একটা দাড়িয়েছে। তার নাম দুরত্ব। কালাম সাহেবের পরিবারেও তেমন দুরত্ব বেড়েছে খুব। কালাম সাহেব নারীর মন বোঝার জন্য বান্দর পালতে চান কিন্তু ছেলের মুখ দেখেন না অনেকদিন। হয়তো ব্লগ দিয়ে রান্না করার ব্যাপারটা তাদের অনেকদিন পর মুখোমুখি করবে।


আমি রাস্তা দিয়ে হেটে আসছি। তখন সন্ধ্যা।আকাশটা খুব রাগ করেছে। রাত হয়ে চাইছেনা বোধ হয়। তাই আকাশে হলদেটে ভাব।হয়তো আকাশের মনটা বোঝা ও খুব কষ্টের। আকাশ কি দিনের পর রাত হতে চায় নাকি রাতের পর দিন?

গুলশান দুই নম্বরের রাস্তা দিয়ে হেটে যেতে যেতে অনেক দূর থেকে দেখলাম একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে একা। আমি কাছে গিয়ে বললাম, " কোন সাহায্য চাই? "। মেয়েটায় মুখটা মায়া মায়া আভা এনে বললো,

" হুম! একটা রিক্সা বা সিএনজি চাই খুব। অনেক সন্ধ্যা হয়ে গেছে "

" আপনি কোথায় যাবেন? "

" বাড্ডা। "

" আমি যাবো মালিবাগ "

" আপনিও সাথে যেতে পারেন। আমি ভাড়া দেবো "

অনেক্ষন ঘুরে মেয়েটার জন্য একটা রিক্সার রাজা ইঞ্জিন রিক্সা নিয়ে আসলাম। একসাথে রিক্সায় ও উঠলাম। কিছুদুর যাওয়ার পর মেয়েটা আমার দিকে ফিরে তাকালো। মুখে একটা ভাজ টেনে বললো,, " অর্ধেক ভাড়া দিতে না পারলে এখানে নেমে যান। আপনার জন্য রিক্সা আস্তে চলছে " । কিচ্ছুক্ষন ভেবাচেকা খেয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। এরপর টুপ করে রিক্সা থেকে নেমে পরলাম। মেয়েটা একটু নয় পুরোপুরি অবাক হয়েছে। সে ভাবেনি অর্ধেক ভাড়ার প্রস্তাব পেয়ে আমি রিক্সা থেকে নেমে যাবো। রিক্সাটা যখন চোখের সামনে দিড়ে উড়ে উড়ে যাচ্ছে তখন তার দিকে তাকিয়ে কালাম সাহেবের কবিতাটা মনে পড়ছে,

"বিধাতা একদা করিয়াছিলো এক ভুল,

নারীর মনে বসাইয়া দিলো, বান্দরের এক চুল।

নারীই কি চায় জানেনা নারী,

বিধাতা তুমি বরই আনাড়ি "

 

"আপনজন"

লেখাঃ মিনহাজ মাহমুদ
"আপনজন" । @অদৃশ্য কাব্য



-বছর তিনেক আগে , পতিতালয়ের এক মেয়েকে বিয়ে করেছিলাম ।
বিয়ের প্রথম রাতে বরের মুখে এমন কথা শুনে,
জান্নাত অবাকের শেষ প্রান্তে পৌছালো । তারপর চোখ বড় বড় করে বলল
-এভাবে না , খোলাসা করে বলেন !

মিনহাজ একটু দম নিয়ে বলতে শুরু করলো ।
মাঝে মাঝে পতিতালয়ে যাওয়া ছিল আমার গভীর অভ্যাস । এক প্রকার নেশা হয়ে গেছিলো । নতুন শরীরের গন্ধ আমাকে খুব টানতো । বাবার অর্থের কোনো সমস্যা ছিল না । তাই এসবে কোনো মাথা ব্যাথাও ছিল না । বন্ধুদের সাথে মদের আড্ডার সকল বিলই আমার পকেট থেকে যেত ।
এর মাঝে যাওয়া আসাই নিষিদ্ধ পল্লীর এক মেয়েকে খুব ভালো লেগে যায় ।
তার সাথে নিয়ম করে প্রতিদিন দেখা করতাম । এক পর্যায়ে আমি ছাড়া সে আর কোনো কাস্টুমার ধরতো না । দুজনের মাঝেই এক অদৃশ্য সুপ্ত মায়ার জন্ম নিয়েছিল । সত্যিই বলতে মেয়েটিকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিলাম । ওর নাম ছিল মেঘা । নামের মতো ওর চেহারাটাও বেশ মায়াবী ছিল । চোখে কাজল দিলে আমি ওর থেকে চোখ ফেরাতে পারতাম না । বাবা মাকে ওর কথা বলেছিলাম । কিন্তু তারা একবারেই না করে দিয়েছিল । আমিও জানতাম এমনটাই হবে । তাই আগাম প্রস্তুতি নিয়েছিলাম । পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান ছিল ।
মা বাবার বিপক্ষে যেয়ে মেঘাকে বিয়ে করলাম । মেঘা সব পরিবেশে অভ্যস্ত ছিল আমি জানি । 
ও কারো দেখে ভয় পেত না । সব পাল্টা জবাব দিত । মেয়েটি নিষিদ্ধ পল্লীর হলেও ওর মাঝে এক সত্য নৈতিকতার ছায়া দেখেছিলাম । পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান বাদ করে বাড়িতে আসলাম মেঘাকে সাথে নিয়ে । 
এটা অবশ্য মেঘাই বলেছিল ।
 
"আপনজন" ।  @অদৃশ্য কাব্য
ওর কথাতে সম্মতি দিয়েছিলাম । কিন্তু বাড়ি থেকে আমাকে কোনো ভাবেই মেনে নিতে চাইনি । 
বাড়িতে মেঘাকে সবার সামনে উপস্থাপন করতেই , সবাই আমার উপর রাগন্বিত হলো । আমাকে আর মেঘাকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা বলে । তখন মেঘা জবাব দেয়
-আপনার ছেলে কথায় যাবে না যাবে সেটা তার ব্যপার । আপনাদের ইচ্ছা হলে তাড়িয়ে দেন । তবে আমি এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না । যেহেতু আপনার ছেলে আমাকে বিয়ে করেছে , সেই সূত্রে আমি এই বাড়ির বউ । আর এখানে আমার অধিকার আছে । আমি আমার অধিকার থেকে একটুও বঞ্চিত হতে রাজি নই । এখন যদি আপনাদের ইচ্ছা হয় ছেলেকে তাড়িয়ে দেন । যা ইচ্ছা করতে পারেন ।
মায়ের সাথে মেঘার বেশ তর্কাতর্কি চলল। মা এক পর্যায়ে বললেন
-দেখ মিনহাজ দেখ ! কাকে বিয়ে করেছিস । মান সম্মান বলে আর কিছু রাখলি না । এই মেয়ের না আছে ভদ্রতা , না আছে সুশিক্ষা । দেশে কি মেয়ের অভাব ছিল ! শেষমেশ একটা নর্তকীকে বিয়ে করলি ! তোর রুচি এত লোপ পেয়েছে , আমার ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে ।
মায়ের কথা শুনে মেঘা তখন বেশ জোর গলায় বলল
-আমাকে নর্তকী বলেন আর পতিতা বলেন ! আমি কিন্তু এখন এই বাড়ির বউ । আপনার ছেলের বউ । সেই ক্ষেত্রে একটু ভেবে বলবেন । কিছুক্ষণ আগে আমার একটা পরিচয় ছিল ! এখন আমার জীবনে নতুন একটা পরিচয় আছে ।
আর আমাকে যদি যথাযথ অধিকার না দেওয়া হয় তাহলে আমি সরাসরি ক্যাস করে দেব ।
বাবা এবার মুখ খুললেন ।
-ক্যাস করতে কত টাকা লাগে জানো ? শুধু ক্যাস করলেই হয় না , ক্যাস চালানোর জন্য টাকা প্রয়োজন ।
-পুলিশরা যে খুব একটা চরিত্রবান এটা আপনাকে কে বলেছে ? টাকা নাই , দেহ তো আছে ! এক রাত একটু ফষ্টিনষ্টি করলেই টাকা ছাড়া আমার কথায় নাচবে ।
মা বিশাল রাগন্বিত চেহারা নিয়ে বললেন
-ছিঃ ছিঃ ! বেয়াদপ মেয়ে । বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তাও জানেনা !
-বাবার বয়সের মানুষও দুইশত টাকার টিকিটের বিনিময়ে আমার সাথে রাত কাটিয়েছে । কাদের সম্মান করবো ? এই সমাজের মানুষের আসল চেহারা গভীর রাতে দেখা যায় । তাদের কতশত মুখোশ ! সবাই রাতে মুখোশ খোলে না । কেউ কেউ দিনের আলোয় বুঝিয়ে দেয় সে কতটা ভালো মানুষ । বিপদে পড়লে কারো কাছে সাহায্যের জন্য যাবেন , সে আপনাকে ঠিক তার মুখোশের আড়ালের চেহারা দেখিয়ে দেবে ।
মেঘার সাথে আর তর্ক না করে মা বাবা রুমে চলে যায় । সেই থেকে আমরা নিজেদের বাড়িতেই থাকতাম । মা বাবা ঠিক মতো কথা বলতো না । মেঘা কথা বলতে চাইলেও তারা কথা বলতো না । আমার সাথেও তেমন কথা বলতো না । কিন্তু মেঘার সাথে আমার বোন অমিতার বেশ ভাব জমে যায় ।
মেঘার ব্যপারটা আত্মীয়রা জানার পর আমাদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে অনেক কটু কথা শোনায় । মা এই জন্য সব চেয়ে বেশি রেগেছিলেন । তার বোনদের কাছেও কোনো সম্মান পেত না ।
মিনহাজ এবার থামলো । এক টানা অনেকক্ষণ কথা বলায় একটু হাপিয়ে উঠেছে । জান্নাত ঘড়িতে দেখলো
১২ টা ৫৪ মিনিট । মধ্য রাত বলা যায় । মধ্য রাতে কফি খাওয়া জান্নাতের একটা পুরনো অভ্যাস । কিন্তু এখন সে নিরুপায় । আজকে বিয়ে হয়েছে । এমন অদ্ভুত একটা কাজ করলে তা খারাপ দেখাবে । মধ্য রাতে কফি খাওয়া ! মিনহাজ ব্যপারটা কিভাবে নেবে এটা ভেবে জান্নাত কিছু বলতে পারছে না । মিনহাজ বলল
-আচ্ছা , ঘুমাও ! ঘুম পাচ্ছে খুব ।
 
"আপনজন" ।  @অদৃশ্য কাব্য


জান্নাত বলল
-না , গল্পটা আজ রাতে শেষ না করে ঘুমাবো না । আপনি বরং জিরিয়ে নিন । আমি ঝটপট কফি করে নিয়ে আসি । কফি খেতে খেতে বাকি কথা হবে ।
মিনহাজ জান্নাতকে রান্নাঘর দেখিয়ে দিয়ে বেলকনিতে এসে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালো । অর্ধেক সিগারেট শেষ না হতেই জান্নাত এসে হাজির ।
-উঁহুঁ , ধূমপান করা চলবে না । ফেলেন বলছি ।
মিনহাজ সিগারেটটা অ্যাসট্রেতে ফেলে জান্নাতের হাত থেকে কফির মগটা নিল । গরম কফির মগে চুমুক দিয়ে জান্নাত বলল
-তারপর কি হলো বলেন ?
-আগামীকাল বলি ?
জান্নাত কপট রাগ দেখিয়ে বলল
-বললাম তো আজই বলতে হবে !
মিনহাজ ব্যপারটা এড়িয়ে যেয়ে বলল
-আপনার যে মধ্য রাতে কফি খাওয়ার নেশা আছে এটা বললেই পারতেন ।
-আপনি কিভাবে জানলেন ?
-অমিতা বলেছে ।
জান্নাত খানিকটা লজ্জা পেল । ইশ , অমিতা আর প্রেস্টিজ বলে কিছু রাখলো না ।
-জেনেই যেহেতু গেছেন আর লুকিয়ে লাভ কি ! আর আপনি কিন্তু খুব সাবধানে মেইন টপিক এড়িয়ে যাচ্ছেন ।
মিনহাজ হেসে দিয়ে বলল
-না শুনে ছাড়বেন না দেখছি । তবে শোনেন ,
মেঘার সাথে মা বাবাও আস্তে আস্তে মিশে গেছিলো প্রায় । মেঘার অসুস্থ এক মা আর ছোট বোন ছিল । তাদের সকল খরচ মেঘা দিত । কিন্তু বিয়ের পর মেঘা ওর পেশা ছেড়ে দেয় তাই এইগুলো আমি দিতাম ।
আমিও বাবার ব্যবসা দেখা শুরু করি । বিয়ে করেছি , আলাদা একটা চাপ সব সময় মাথায় ঘুরপাক খেত । মেঘার দরুনে সকল প্রকার নেশা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম । মদ্যপান থেকে শুরু করে সব নেশা চুকিয়ে একদম পারফেক্ট ছেলে হতে কেবলই শুরু করেছিলাম । আমার এই পরিবর্তন হওয়ায় বাবা মা মেঘার উপর একটু সন্তুষ্ট হয় । তাদের মাঝে দূরত্ব কমতে থাকে ।
প্রচণ্ড ভালোবাসার মধ্যে দিন কাটতে থাকে । কিন্তু এর মাঝে একটা ঝড় নেমে আসে আমাদের জীবনে । অফিসে কাজের জন্য আমি কয়েকদিন বাসার বাইরে যায় । এর মাঝে বাড়িতে ডাকাত হামলা করে । অমিতা ম্যাসে ছিল তাই ওর কোনো ক্ষতি হয়নি । ডাকাতেরা বাবা মাকে প্রচুর মারধর করে । সকল টাকা পয়সা সোনা যা ছিল সব নিয়ে যায় । পরের দিন আমি বাড়ি ফিরে জানতে পারি মা বাবা হসপিটালে । প্রতিবেশীদের কেউ একজন হাসপাতালে নিয়ে আসে । কোনো দরকারে আমাদের বাসায় গিয়েছিল । আর যেয়ে মা বাবাকে অজ্ঞান অবস্থায় পাই । আমার বা অমিতার এমনকি আমাদের কোনো আত্মীয়র সাথে যোগাযোগ করার কোনো ওয়ে তাদের কাছে ছিল না । আমি বাড়িতে এসে তাড়াতাড়ি হসপিটালে ছুটে যায় । 
তারপর সবাইকে খবর দিই ।
 
"আপনজন" ।  @অদৃশ্য কাব্য


জান্নাত হঠাৎ বলল
-মেঘার কি হলো ? ওর কথা তো বললেন না !
মিনহাজ একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
-বাবা মা জ্ঞান ফেরার পর আমার সাথে যখন কথা বলল , তখন আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম । এই ডাকাত দলের সাথে নাকি মেঘার সম্পর্ক আছে । মেঘার সহায়তায় ওরা বাড়িতে প্রবেশ করে ।
জান্নাত বলল
-আপনি কি এটা বিশ্বাস করেছেন ?
-বিশ্বাস করতে পারিনি । তবে মা বাবার এই অবস্থার দিকে তাকিয়ে বিশ্বাস করেছি । মনে মনে মেঘাকে খুব ঘৃণা হয় ।
-মেঘার সাথে আর কখনও দেখা হয়েছে ?
-না !
মিনহাজ একটা সিগারেট ধরালো । সিগারেটের প্রচণ্ড নেশা চেপেছে । সিগারেট এখন অতীব প্রয়োজন মিনহাজের ।
-এমনও তো হতে পারে , মেঘা নয় ডাকাত দলের সাথে আপনার মা বাবার প্ল্যান ছিল ! তারাই মেঘাকে ওদের হাতে লেলিয়ে দিয়েছে । আপনার জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ! আপনার বাবা মা উপরে মেনে নিলেও আদৌও কি মন থেকে মেঘাকে মেনে নিয়েছিল ?
জান্নাতের কথায় মিনহাজের হাত থেকে সিগারেটটা পরে গেল ।
মিনহাজ অবাক হয়ে বলল -কে তুমি ?

"একটি কালো মেয়ে চাই"

একটি কালো মেয়ে চাই । @অদৃশ্য কাব্য



দুইদিন টিউশনি করানোর পর তৃতীয় দিন ছাত্রীর মা আমায় ডেকে আমার হাতে একটা খাম দিয়ে বললো,
- কাল থেকে তোমার আর আমার মেয়েকে পড়াতে হবে না। তুমি দুই দিন আমার মেয়েকে পড়িয়েছো। আমি তোমাকে ১ মাসেরই টাকা দিলাম।
আমি অবাক হয়ে ছাত্রীর মাকে বললাম,
-- আন্টি কিছু মনে না করলে জানতে পারি আমার অপরাধটা কি?
আন্টি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,
- না, তোমার কোন অপরাধ নেই। এমনিতেই তোমাকে আসতে হবে না।

আমি তখন ছাত্রীর মাকে বললাম,
-- আন্টি আমি আপনার মেয়েকে ১ মাস পড়াই। তারপর যদি আপনার মনে হয় আমি আপনার মেয়েকে ঠিক মত পড়াতে পারছি না; তখন না হয় আমাকে বাদ দিয়ে দিবেন। আমার আপত্তি থাকবেনা।

এইবার ছাত্রীর মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
- আসলে আমার মেয়ে তোমার কাছে পড়তে চাচ্ছে না। শুধু ভালো পড়ালেই হয় না একটু দেখতে শুনতেও ভালো হতে হয়। তোমায় দেখলে না কি আমার মেয়ে ভয় পেয়ে যায়...
আমি আন্টির হাতে খাম দিয়ে বললাম,
-- টিউশনি করাতে হলে যে ফর্সা ভালো চেহারার অধিকারী হতে হয় তা আগে জানতাম না। যদি জানতাম তাহলে বিশ্বাস করেন আমি আপনার মেয়েকে পড়াতে আসতাম না...
ছাত্রীর বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাটছি আর কলেজ জীবনের কথা ভাবছি। কলেজে একবার একটা অনুষ্ঠানের উপস্থাপনার জন্য স্যার ভালো একজন উপস্থাপক খুঁজছিলেন। আমি সবার সামনে হাত তুলে বলেছিলাম,
- স্যার, আমি ভালো উপস্থাপনা করতে পারি। স্কুলে পড়ার সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমি উপস্থাপনা করতাম..
স্যার আমার ভালো করে দেখে হাসতে হাসতে বলেছিলো,
-- তোর মত কাউয়া(কাক) যদি উপস্থাপনা করে তাহলে অনুষ্ঠানে যে কয়জন মানুষ আসবে সেই মানুষগুলোও পালাবে...
স্যারের এই এক কথাতে রাতারাতি আমার নাম আবুল বাশার পিয়াস থেকে "কাউয়া বাশার পিয়াস" হয়ে গিয়েছিলো। তখন আর কেউ আমায় আবুল বাশার পিয়াস নামে চিনতো না। সবাই চিনতো "কাউয়া পিয়াস" নামে...
 
একটি কালো মেয়ে চাই । @অদৃশ্য কাব্য
কয়েকদিন আগে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা যাচ্ছিলাম। আমার পাশের সিটে বসেছিলো সুন্দরী একটা মেয়ে। আমি যখন আমার সিটে বসতে যাবো তখনি মেয়েটা নাক মুখ ওড়না দিয়ে চেপে ধরলো। বাস কিছু দূর যাবার পরেই মেয়েটা বাসের কন্ট্রাক্টরকে ডেকে বললো,
- আমায় এই সিটটা পাল্টে দেন তো। আমি অন্য কোথাও বসবো।
বাসের কন্ট্রাক্টর আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। তারপর মেয়েটাকে বললো,
-- আপা, এই লোকটা কি আপনার সাথে অসভ্যতামি করেছে? যদি কোনোরকম কিছু করে থাকে তাহলে বলেন। আমি এখনি লোকটাকে বাস থেকে নামিয়ে দিতেছি। কন্ট্রাক্টরের মুখ থেকে এমন কথা শুনে বাসের অন্য সব যাত্রীরা আমার উপর ক্ষেপে উঠলো। একজন লোক চিৎকার করে বললো,
~ অবশ্যই নোংরামি করেছে। তা না হলে আপা সিট ছেড়ে উঠতে যাবে কেন।
এক ভদ্রমহিলা মুখ বাঁকিয়ে বললো,
~ চেহারা দেখেই বুঝা যায় বদমাইশ টাইপ। এইসব কুলাঙ্গারদের জন্য মেয়েদের রাস্তাঘাটে চলাচলই এখন দায় হয়ে পড়েছে।

এমন একটা অবস্থা হয়ে পড়েছিলো যে বাসের সবাই মিলে এখন আমায় মারতে আসবে। আমি বহু কষ্টে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে মেয়েটাকে বললাম,
-- আপনি আমার ছোট বোনের মত। আমি কি আপনার সাথে কোন নোংরামি করেছি?
মেয়েটা মাথা নিচু করে বললো,
- না।
আমি তখন বাসের যাত্রীদের বললাম,
-- ভাই আমার অপরাধ কি জানেন? আমার অপরাধ হলো আমি দেখতে কালো। আপনাদের মত সাদা চামড়ার কিছু মানুষ মনে করে আমাদের মত কালো মানুষের গা থেকে গন্ধ বের হয়। আপনাদের ধারণা পৃথিবীর সমস্ত খারাপ মানুষ কালোই হয়৷

যে ভদ্রমহিলা আমায় বদমাইশ, কুলাঙ্গার বলেছিলো সেই মহিলার কাছে গিয়ে বললাম,
-- আপনি আমার চেহারা দেখেই বুঝে গেলেন আমি বদমাইশ। বিশ্বাস করেন আমি কোনো বদমাইশি করছি তো দূরের কথা আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকাছি পর্যন্ত না। কিন্তু কেন জানি না এই মুহূর্তে আপনার সাথেই আমার বদমাইশি করতে ইচ্ছে করছে...।
 
একটি কালো মেয়ে চাই ।@অদৃশ্য কাব্য
নিউমার্কেট এসেছিলাম কিছু শপিং করতে। এমন সময় আমার রুমমেট রাকিব ফোন দিয়ে বললো,
- মেসে আসার সময় দোকান থেকে আমার জন্য একটা ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম ক্রিম নিয়ে আসিস তো। আমি তোকে পরে টাকা দিয়ে দিবো।

রাকিবের কথা মতন কসমেটিকসের দোকানে গিয়ে ক্রিমের কথা বলতেই দোকানের ছেলেটা আমায় দেখে মুচকি হাসলো। তারপর আমার হাতে ক্রিমটা দিতে দিতে বললো,
- শুধু শুধু ভাই টাকা গুলো জলে ফেলবেন। আপনার যে কালার আপনাকে যদি ৩ দিন ৩ রাত হুইল পাউডার দিয়ে পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়; তবুও আপনার কালারের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হবে না।

দোকানের ছেলেটার কথা শুনে মনে হচ্ছিলো ওর গালে একটা সজোরে থাপ্পড় মারি কিন্তু ওরই বা কি দোষ। দোষ তো আমার বাবা মার। কারণ উনারা আমাকে জন্ম দিয়েছে।

দোকান থেকে বের হয়েই মাকে ফোন দিলাম। মা ফোনটা রিসিভ করতেই আমি মাকে বললাম,
-- মা, শুনেছি বাবা মা কোনো পাপ করলে তার দায়ভার কিছুটা সন্তানের উপর এসে পড়ে৷ তোমরা কি কোনো পাপ করেছিলে যার ফল স্বরূপ তোমাদের ঘরে আমার মত একটা কালো ছেলে জন্ম নিলো।

মা আমার কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-তুই আবার তোর গায়ের রঙ কালো দেখে মন খারাপ করছিস? তুই কালো দেখে কি হয়েছে। তুই আমার কাছে সোনার টুকরো ছেলে।
মা কেঁদে দিয়েছিলো দেখে আমি মাকে হাসানোর জন্য বললাম,
-- দেখলে মা তুমিও আমায় তেমন ভালোবাসো না। যদি ভালোবাসতে তাহলে সোনার টুকরো না বলে হীরের টুকরো বলতে।

আমার কথা শুনে মা হাসতে হাসতে বললো,
- তুই আমার কোহীনূর হীরার টুকরো ছেলে...
 
একটি কালো মেয়ে চাই । @অদৃশ্য কাব্য


সবাই আমাকে কালো বলে দূরে সরিয়ে রাখলেও মা বাবার দোয়া সবসময় আমার সাথেই ছিলো। আর সে জন্যই হয়তো আমি খুব ভালো একটা চাকরি পেয়েছি। চাকরি পাওয়ার পর থেকেই আমার উপর বাবা মা অত্যাচার করা শুধু করলো বিয়ের জন্য। আমিও বিয়ে করবো বলে রাজি হয়েছি তবে একটা শর্ত দিয়েছি। বিয়ে করলে আমি কালো কোন মেয়েকেই করবো।

আজ মেয়ে দেখতে যাবো। মাকে ডেকে বললাম,
- মেয়ে কালো তো?
মা বললো,
-- আমি মেয়েকে এর আগেও দেখেছি। মেয়ের গায়ের রঙ কালোই। কিন্তু আজ আমরা দেখতে যাবো বলে মেক-আপ করে হয়তো সুন্দরী হয়ে যাবে। তবে চিন্তা করিস না। মুখ ধোঁয়ার পর মেয়ে আবার কালো হয়ে যাবে...

আমরা ড্রয়িং রুমে বসে আছি মেয়ে দেখার জন্য। কিছুক্ষণ পর মেয়ে আসলো। মেয়েকে দেখেই কয়েক মিনিটের জন্য আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। একটা মেয়ে কি করে এত সুন্দর হতে পারে। ভালো করে মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি মুখে কোন মেকাপ নেই। শুধু চোখে হালকা একটু কাজল আছে। মেয়ে দেখা শেষ হলে আমি মাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বললাম,
-- মা, তুমি না বলেছিলে মেয়ে কালো। এই মেয়ে তো দেখছি বেজায় সুন্দরী। শুধু সুন্দর না ভয়ংকর রকম সুন্দরী। তোমায় আগেই বলেছিলাম আমি, নিজে যেমন ঠিক তেমন মেয়েই বিয়ে করবো।
আমার কথা শুনে মা বললো,
-আরে মেয়ে সুন্দর না। মেক-আপ করেছে তো তাই সুন্দর লাগছে।
আমি মায়ের হাতটা ধরে বললাম,
-- কেন শুধু শুধু মিথ্যা বলছো মা। মেয়ে কোনো মেক-আপ করে নি। এত সুন্দর একটা মেয়ে।হয়তো ও চাইবে ওর হাজবেন্ড যেন খুব সুদর্শন হয়। আমার সাথে বিয়ে হলে দেখা যাবে মেয়েটার লাইফটাই নষ্ট হয়ে গেছে। আমার সাথে একটা সেলফি তুলতে পারবে না। বান্ধবীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে লজ্জা পাবে। একসাথে ঘুরতে লাজ্জা পাবে।
আমার কথা শুনে মা কাঁদতে কাঁদতে বললো,
- তুই কালো হয়েছিস দেখে কি একটা সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করতে পারবি না?
 
একটি কালো মেয়ে চাই । @অদৃশ্য কাব্য


আমি মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
-- না পারি না মা। একটা সুন্দরী মেয়ে কখনোই একটা কালো ছেলেকে বিয়ে করতে চায় না। যদি কখনো বিয়ে করতে রাজি হয় তাহলে ভেবে নিবে হয় মেয়েটা বাবা মায়ের চাপে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। নয়তো কালো ছেলেটার খুব ভালো ক্যারিয়ার আছে সেজন্য রাজি হয়েছে...

দুপুরে অফিসে বসে কাজ করছি। এমন সময় একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো। আমি ফোনটা রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে একটা মেয়ে বললো,
- আমি শ্রাবণী। কাল আপনারা যে মেয়েটাকে দেখতে গিয়েছিলেন আমিই সেই মেয়ে।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
--আপনি আমায় হঠাৎ ফোন দিলেন যে?
মেয়েটি তখন বললো,
- আমি আপনার অফিসের নিচে। দয়া করে একটু আসবেন? আপনার সাথে আমার জরুরী কিছু কথা আছে....

একটা রেস্টুরেন্টে আমি আর মেয়েটি বসে আছি। রেস্টুরেন্টের অনেকেই আমাদের হা করে দেখছে। আমি চেয়েছিলাম রেস্টুরেন্ট বাদে অন্য কোথাও বসতে কিন্তু মেয়েটিই আমায় জোর করে এইখানে নিয়ে আসলো।

কফির মগে মেয়েটি চুমুক দিতে দিতে আমায় বললো,
-- সত্যি বলতে আপনাকে আমার প্রথম দেখাতে ভালো লাগে নি। কিন্তু আড়লে যখন আপনি আপনার মায়ের সাথে কথা বলছিলেন আমি আপনার সব কথা শুনে নিয়েছিলাম। তারপর থেকেই আপনাকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছি। ১ মিনিটের কথা শুনে যে কাউকে ভালোবেসে ফেলা যায় সেটা যদি আমার সাথে না ঘটতো তাহলে আমি হয়তো কখনোই বিশ্বাস করতাম না।
 
একটি কালো মেয়ে চাই । @অদৃশ্য কাব্য


আমি মাথা নিচু করে বললাম,
-- তার মানে আপনি আমায় করুণা করছেন?
মেয়েটি কফির মগটা রেখে আমার হাত ধরে বললো,
- আমায় একটাবার সুযোগ দাও। আমি তোমায় এতটাই ভালোবাসবো যে মেয়েদের সম্পর্কে তোমার ধারণাটাই পাল্টে দিবো....

ডাক্তারের চেম্বারের সামনে বসে আছি। এমন সময় দেখি ডাক্তারের চেম্বার থেকে আমার ছাত্রী পিহু আর ওর মা বের হচ্ছে। আমি আন্টিকে সালাম দিয়ে বললাম,
-- আন্টি আমায় চিনতে পেরেছেন? আমি আপনার মেয়েকে দুইদিন পড়িয়েছিলাম। কিন্তু ৩ দিনের দিন আমায় বের করে দিয়েছিলেন।
আন্টি তখন বললো,
- হ্যাঁ। চিনতে পেরেছি..

এমন সময় রুম থেকে শ্রাবণী এসে বললো,
- সরি সরি, আজ রোগীর খুব চাপ ছিলো তাই দেরি হয়ে গেলো। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছো। তাই না?
আমি তখন আন্টিকে বললাম,
--আন্টি, আমার স্ত্রী শ্রাবণী।
আর শ্রাবণীকে বললাম,
- ও হলো পিহু। একসময় আমার ছাত্রী ছিলো।
শ্রাবণী মুচকি হেসে বললো,
-- হ্যাঁ আমি জানি ওর নাম পিহু। আমিও ওর ট্রিটমেন্ট করছি।

আন্টি আর পিহু আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। আমি হেঁটে যেতে যেতে শ্রাবণীকে বললাম,
-- পিহুর কি হয়েছে?
শ্রাবণী বললো,
- এক টিচারের সাথে ওর শারিরীক সম্পর্ক ছিলো। পরে প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়। কোন ক্লিনিকে যেন এভরসন করিয়েছে। এখন বিয়ের পর আর বাচ্চা হচ্ছে না...
হঠাৎ শ্রাবণী দাঁড়িয়ে বললো,
- ঐ, এই টিচারটা তো কোনোভাবে তুমি নাতো?
আমি রেগে গিয়ে বললাম,
-- আমি কেন হতে যাবো?আমি কালো বলেই তো আমাকে ৩ দিনের দিন বের করেই দিয়েছিলো।
আমার কথা শুনে শ্রাবণী হাসতে হাসতে বললো,
- নীল শার্টে তোমায় খুব সুন্দর লাগছে।
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
-- কাউয়ার মত লাগছে...
আমার কথা শুনে শ্রাবণী আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,
- যে ছেলে নিজে নিজেকে সম্মান করে না;তাকে মানুষে কিভাবে সম্মান করবে..
শ্রাবণী রাগ করে একা একা হাঁটছে। আর আমি ওর পিছু পিছু যাচ্ছি আর ভাবছি, কালো কলঙ্কের দাগ হলেও মাঝে মধ্যে কালোকে বাদে সাদাকে অসম্পূর্ণ লাগে..।


"এক ডিভোর্সি নারীর বাস্তব জীবনী"

"এক ডিভোর্সি নারীর বাস্তব জীবনী" @অদৃশ্য কাব্য

ডিভোর্সের আগে শ্বশুর বাড়ি জেলখানা মনে হতো,
ডিভোর্সের পরে এখন নিজের বাড়িই দোজখের মত লাগছে। (বাণীতে ডিভোর্সি নারী)

পরিস্থিতি যেমনই হোক, ডিভোর্স কখনো সুখ দেয়না! কমপক্ষে কোন মেয়ে সুখী হতে পারে না।

জানিনা, আমি কেন লিখছি? হয়তো এজন্য কারণ, আমি চাই আর কেউ আমার মতো ভুল না করুক। হয়তো এজন্য কারণ, আমি চাই ঠুনকো কারণে সংসারগুলো ভেঙে না পড়ুক।
 
"এক ডিভোর্সি নারীর বাস্তব জীবনী" ।  @অদৃশ্য কাব্য
আমি ঊনিশ বছর বয়সী একজন নারী।
আমাদের বিয়ে হয়েছিল আমার পছন্দে।
সংসারও টিকে ছিল দের বছর। আমাদের একটা ছেলেও আছে, ওর বয়স এখন এক বছর।

আমার স্বামীর স্বভাব-চরিত্র সবই বেশ ভালোই ছিল। শুধু একটু জেদি । অবশ্য তাও সবসময় না, মাঝেমধ্যে। মানুষ ভাবে ওর বদ জেদের জন্যই বুঝি আজ এই অবস্থা। কিন্তু আমি জানি, আমাদের সমস্যার শুরুটা ওর দিক থেকে হয়নি।

সব সংসারেই তো টুকটাক কিছু সমস্যা থাকে। ওরকম আমাদের মধ্যেও মাঝেসাঝে ঝগড়া-ঝাটি হতো। কিন্তু ঝগড়া বাধলেই আমি তল্পিতল্পা গুছিয়ে বাপের বাড়ির দিকে হাঁটা দিতাম। বাপের বাড়িতে বোনরাও আসতো, আর ভাইরা তো ছিলই।

ওদের কাছে কেদেকেটে সব বলতাম। তখন সবাই ওকে ফোন করে কথা শোনাত। আমার ছোট বোন তো রীতিমত অপমান করত!
আমার কাছেও মনে হতো, ঠিকই আছে। কত বড় সাহস, আমার সাথে লাগতে আসে। আমাকে নিজের মতো চালাতে চায়। আমার মধ্যে কেমন একটা জেদ কাজ করতো।
ওর কাছে ছোট হব, ওর কাছে নিজের ভুল স্বীকার করব, মাফ চাইব, এটা ভাবতেই পারতাম না।
উল্টো বড় গলা করে বলতাম,“ডিভোর্স দাও! তোমার মতো লোকের সাথে কে সংসার করে?”
নাহ, ডিভোর্স আমি কখনোই মন থেকে চাই নি।
ওটা ছিল মুখের কথা।
ওর সামনে ছোট হওয়ার চাইতে ডিভোর্স চাওয়াই আমার কাছে সঠিক মনে হতো।
 
"এক ডিভোর্সি নারীর বাস্তব জীবনী" ।  @অদৃশ্য কাব্য
একদিনের কথা এখনও মনে পড়ে। সেদিন ছোট একটা ব্যাপার নিয়ে তর্ক করতে করতে দুজনেই খুব উত্তেজিত হয়ে পড়েছি। রাগে আমার শরীর কাঁপছে। যা মুখে আসছে তাই বলছি। তুই-তোকারি, গালিগালাজ, অপমান কিচ্ছু বাদ যায় নি।
এক পর্যায়ে সহ্যের বাধ ভেঙে ও আমার গায়ে হাত তুললো!
এর আগে কিংবা পরে কখনোই ও আমার গায়ে হাত তুলে নি। কিন্তু ঐ একটা থাপ্পড়, ওটাই যথেষ্ট ছিল।
আমি বাপের বাড়ি চলে গেলাম।
আর হ্যাঁ বরাবরের মতো এবারও নিজের দিকটা না বলে খালি ওর দিকটাই বলে গেলাম।

মানুষের দোষ দিয়ে আর কী লাভ! সবাইকে যা বলেছি, সেটার উপর ভিত্তি করেই তারা বিচার করেছে। পরিবারের সবাই বললো, এমন ছেলের সাথে সংসার করার কোনো দরকার নাই।
মামলা ঠুকে দাও।
আমি সবার পরামর্শে মামলা করলাম।
ওর নামে নারী নির্যাতনের কেইস করা হল।
খুব দ্রুতই ওকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। ওর পরিবার থেকে মুরুব্বিরা এসে বার বার অনুরোধ করল, আমি যেন এই কেইস তুলে নিই।

ভেতরে ভেতরে আমিও চিন্তা করতাম, আচ্ছা, আমার স্বামী কি আসলেই জালেম? ও কি কোনদিন নিজে থেকে আমার গায়ে হাত তুলেছে? আমি যদি ওকে এত কথা না শোনাতাম, তাহলে কি ও আমার গায়ে সেদিন হাত তুলতো?
 
"এক ডিভোর্সি নারীর বাস্তব জীবনী" ।  @অদৃশ্য কাব্য


আমার বাবা মা আমাকে বুঝিয়েছিল, আমি যদি এতকিছুর পর ফিরে যাই, তাহলে ও ভাববে,
আমি বুঝি অসহায়। আমাকে আরো পেয়ে বসবে। আমার উপর ইচ্ছামত ছড়ি ঘুরাবে। একবার গায়ে হাত তুলেছে মানে বার বার একই কাজ করবে। কাজেই নিজে থেকে ফিরে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।

কিন্তু আমার মনের ভেতর কে যেন চিৎকার করে বলতো, ও তো এমন লোক না। ও যেদিন আমার গায়ে হাত তুলেছিল, সেদিনই হাটু জোর হয়ে আমার কাছে মাফ চেয়েছে। এসব ভেবে ভেবে আমি মামলা তুলে নিলাম। তবে ওর কাছে ফেরত গেলাম না।
কিছুদিন পর দুই পরিবার থেকে বিচার-সালিশ হল। সবার কাছে ও দোষী প্রমাণিত হল।
সবাই ওকে নানা কথা বোঝাল, উপদেশ দিল। তারপর আবার সংসার শুরু করলাম।
 
"এক ডিভোর্সি নারীর বাস্তব জীবনী" । @অদৃশ্য কাব্য
এর পরের কয়েক মাস ভালোই চলছিল,
কিন্তু হুট করে আবার কী একটা নিয়ে আমাদের ঝগড়া বেধে গেল। ব্যস, কাপড়চোপড় গুছিয়ে আবার আমি বাপের বাড়ি গিয়ে উঠলাম।
এর মধ্যে শুনলাম ও নাকি খুব অসুস্থ !
আমি বাসায় ফিরতে চাইলে আমার পরিবার বললো, এভাবে একটা ঝগড়ার পর একা একা ফিরলে সেটা ভালো দেখায় না।
আর আমার বোনদের কথা ছিল, ওসব অসুস্থ-টসুস্থ কিছু না, সব বাহানা!

আমরা চাচ্ছিলাম ঐ পক্ষ থেকে কিছু আত্মীয়-স্বজন এসে ওর ভুল স্বীকার করে আমাকে হাতে পায়ে ধরে নিয়ে যাক।
কিন্তু এবার কেউই আসলো না।
এরও কিছুদিন পর ও আমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিল। ডিভোর্স লেটার দেখে আমাদের পরিবারের সবাই খুব খেপে গেল।
কতবড় সাহস, মেয়েকে এত কষ্টে রেখেছে, তার উপর ডিভোর্স লেটার পাঠায়। সবার কথায় আমার কাছেও মনে হলো ঠিকই তো, কত বড় সাহস! আমাকে ডিভোর্স দিতে চায়? ওর সব ভুলগুলো চোখের উপর ভাসতে লাগলো। মা বাবা মনে করিয়ে দিলো, ও হলো সেই ছেলে যে কিনা আমার গায়েও হাত তুলেছে।

প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে জ্বলতে আমিও ঠিক করলাম, এবার ডিভোর্সই দেব। কে চায় এমন ফালতু লোকের সংসার করতে? কোর্টে গিয়েও ওকে হেনস্থা করার চেষ্টা করলাম। আমার মাসিক খরচ বাড়িয়ে একটা আকাশছোঁয়া অংক দাবি করলাম! আমি চাচ্ছিলাম ওর যেন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। যেন নিজে থেকে আমার কাছে এসে আবার সংসার করতে চায়।
 
"এক ডিভোর্সি নারীর বাস্তব জীবনী" ।  @অদৃশ্য কাব্য
আসলে ডিভোর্স হোক আমি কখনোই চাই নি৷
কিন্তু জিদ আমাকে খেয়ে নিচ্ছিল। আগ বাড়িয়ে ওকে ডিভোর্স তুলে নিতে বলা আমার পক্ষে অসম্ভব!
ওর কাছে ছোট হওয়া আমি মানতেই পারি নি।

কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার, ও আমার আকাশছোঁয়া সমস্ত দাবি মেনে নিলো। আমাদের ছেলেকে আমি পেয়ে গেলাম। ভরণপোষণ, মাসিক খরচ, ওর সম্পত্তি সব! বিনিময়ে ও পেলো শুধু ডিভোর্স।

আমাদের ডিভোর্স হয়েছে আজ সাড়ে তিন বছর।
ও আবারও বিয়ে করেছে। সুখেই আছে বোঝা যায়। আসলে ওর মতো নির্ঝঞ্ঝাট স্বামীকে নিয়ে মেয়েরা হয়তো সুখেই থাকবে।

এখন আমার নিজের কথা ভেবে আফসোস হয়। মানুষের মুখের কথা কখনো কখনো ছুরির চেয়েও ধারালো হতে পারে। ও আমাকে একবার থাপ্পড় মেরেছিল ঠিকই, কিন্তু আমি কথার তীরে ওকে ছিন্নবিছিন্ন করে ফেলতাম।
শারীরিক নির্যাতন করি নি সত্যি,
কিন্তু মানসিকভাবে কষ্ট দিতাম। এসব কথা আমার মা বাবাকে কখনোই বলা হয় নি।
নিজের দোষের কথা মানুষ কতটাই বা বলে!
 
"এক ডিভোর্সি নারীর বাস্তব জীবনী" ।  @অদৃশ্য কাব্য
মাঝে মাঝে ভাবি, ইশ, আমার পরিবার যদি একটু নিজে থেকে বুঝে আমাকে সংসার করার উপদেশ দিতো। যখন আমি ওর কাছে ফিরে যেতে চাইতাম, তখন ওর খারাপটা না বলে যদি একটু ভালো দিকগুলোর কথা মনে করাতো! আমি যদি নিজের জিদ নিয়ে পড়ে না থেকে, একটু ওর কাছে নত হতাম! তাহলে হয়তো আজ আমাকে এই দিন দেখা লাগতো না।
ডিভোর্সের আগে শ্বশুর বাড়ি জেলখানা মনে হতো,
ডিভোর্সের পরে এখন নিজের বাড়িই দোজখের মত লাগছে।

আজ আমার ভাইবোন বন্ধুবান্ধব সবার নিজেদের সংসার আছ। কিন্তু ছোট্ট ভুলে আমার সব শেষ হয়ে গেছে তাই দোয়া করি আর কারো সাথে যেন এমন না হয়।

"চারিদিকে শুন্যতা আর শুন্যতা"


প্রায় প্রতিদিনই সেহরিতে আমার ঘুম ভাঙতো কান্নার শব্দে! আম্মুর কান্নার শব্দে। আম্মু আমার রুমে এসে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন। তারপর মোনাজাতে কাঁদতেন। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না! কী মায়া সেই কান্নায়! কাঁদবেন বলেই হয়তো আমার রুমে আসতেন। আব্বুর ঘুম ভাঙাতে চাইতেন না। আমার রুম বললেও আসলে ভুল হবে। তখন আমার নিজের কোনো রুম ছিলো না। আমাদের ড্রইংরুমে একটা বেড ছিলো, সেখানেই আমি ঘুমাতাম।
 
"চারিদিকে শুন্যতা আর শুন্যতা" ।  @অদৃশ্য কাব্য


প্রচন্ড ঠান্ডায় অন্ধকার রুমে সাদা ধবধবে লেপের নিচে শুয়ে শুয়ে আমি বোকার মতো আম্মুর কান্না শুনতাম।
আম্মু মোনাজাতে কী বলছেন বোঝার চেষ্টা করতাম। কিন্তু শুধু 'ইয়া আল্লাহ... ইয়া মাবুদ...' ছাড়া কিছুই বুঝতে পারতাম না! আল্লাহর কাছে আম্মুর কী অনুনয়! কী বিনয়! কী আকুতি! সেই মোনাজাতে এতো দরদ থাকতো আমি কিছু না বুঝেও মন খারাপ করতাম! বুকটা ফাঁকা হয়ে যেতো! মনে মনে ভাবতাম আহা আম্মুর এতো কষ্ট?! আম্মু এতো কাঁদে!
আচ্ছা, আমি কেনো এভাবে মোনাজাতে কাঁদতে পারি না!? নিজেকে নিজে বুঝাতাম মনে হয় আমি ছোটো মানুষ তাই! বড়ো হলে নিশ্চয়ই আমিও আম্মুর মতো কাঁদতে পারবো! আম্মুকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য উঠবো কি না, আম্মুর কাছে যেয়ে বসবো কি না এসব ভাবতে ভাবতে আম্মুর ডাক পড়তো 'ওঠো আম্মু! সেহরির সময় হয়ে গেছে।"
 
"চারিদিকে শুন্যতা আর শুন্যতা" ।  @অদৃশ্য কাব্য
আশেপাশের মসজিদ থেকে মাইকে শোনা যেতো "তাড়াতাড়ি উঠি যাউক্কা (তাড়াতাড়ি উঠে যান), আর মাত্র ত্রিশ মিনিট বাকী!" তাও উঠতাম না।
ক্লাস থ্রিতে পড়া ছোটো ভাই মাঝে মাঝে আমার সাথে ঘুমাতো। আমি লেপটা আরো শক্ত করে ছোটো ভাইকে পেঁচিয়ে দিতাম! এতো হাড় কাঁপানো ঠান্ডা ছিলো তখন সিলেটে!
তারপর শুয়ে শুয়ে শুনতাম আব্বু উঠেছেন, আব্বুকে ওযুর জন্য গরম পানি দেওয়া হচ্ছে কিন্তু আব্বু বার বার লজ্জিত স্বরে বলছে না না আমি নিজেই নিয়ে নিবো! ওযু শেষে গামছা খুঁজছেন। আমার আব্বু কখনো তোয়ালে ব্যবহার করতেন না। তাঁর সেই বিখ্যাত পাবনা বা কুষ্টিয়ার সুতি গামছাই ছিলো নিত্যসংগী। রান্নাঘর থেকে খুটখুট শব্দ আসছে। আম্মু আমাদের মোর্শেদাকে বলছে জগে কুসুম কুসুম গরম পানি ভরাতে, টেবিলটা একটু মুছে দিতে, গতরাতের তরকারিটা গরম করতে...
ভাগ্যিস ঐ সময় আমার ফোন ছিলো না। তা না হলে এসব কিছুই শোনা হতো না, শুয়ে শুয়ে ফোন টিপতাম! আর আম্মু এসে নির্ঘাত চিল্লাচিল্লা শুরু করে দিতো 'সেহরীতে উঠেও ফোন! খেতে আসো!"
সবশেষে আব্বু আসতেন ডাকতে। 'কাব্যমনি আসো!' আব্বু ডাকা মানেই ফাইনাল ডাক। এখন আর শুয়ে থাকা যাবে না। আমার উঠতে হবে! মাইকে শুনছি আর মাত্র পনেরো মিনিট বাকী! ঠান্ডায় উঠতে কষ্ট হতো আব্বু বুঝতেন। "লেপ দিয়ে বালিশ পর্যন্ত ঢেকে রাখো তাহলে তোমার বিছানা আর ঠান্ডা হবে না! 
-আব্বুর টিপস!
 
"চারিদিকে শুন্যতা আর শুন্যতা" ।  @অদৃশ্য কাব্য
রানীর মতো বিছানা থেকে উঠতাম। কোনো দায় নাই, দায়িত্ব নাই! সব রেডিমেট! যেয়ে খালি খাবো। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে হাতের কাছে চাদর কিংবা একটা দু'টা সোয়েটার গায়ে জড়িয়ে খেতে বসতাম। আমরা না আসলে আব্বু কখনো শুরু করতেন না। খাওয়ার সময় আব্বু শুধু আমার দিকে গরম পানি এগিয়ে দিতেন। আমি একদমই খেতে চাইতাম না। গরম পানি খেতে আমার একদমই ভালো লাগতো না। আব্বু বুঝাতেন গরম না তো, এটা 'ওয়ার্ম ওয়াটার'! মনে মনে বলতাম ঐ একই কথা তো আব্বু!
আমরা তিনজন মিলে সেহরি করতাম। আমার ছোটোভাই তখনো সব রোজা করতো না। ক্লাস থ্রি-ফোরে পড়তো, সারা বছর অসুস্থ থাকতো। তাই তার বিশেষ ছাড়! আম্মু তাঁর ফোলা ফোলা চোখ নিয়ে আমাদের সাথে বসতেন কিন্তু কখনো খেতেন না। আম্মুর কাজই ছিলো 'কাব্য, আরেকটু ভাত নাও!, "কাব্যর আব্বু দুধ -ভাত খাবে?", "এই মোর্শেদা আরেক পিছ মাছ নিয়ে যা".... সবার শেষে আম্মু দুই গ্লাস পানি খেতেন। আর যদি বাসায় দই থাকতো খুব বেশি হলে দুই চামচ দই খেতেন। এটাই ওনার সেহরি। আম্মু সেহরিতে কখনো খেতে পারেন না।
আমি আড়চোখে আম্মুকে দেখতাম কে বলবে এই মহিলা এতোক্ষন মোনাজাতে কেঁদেছেন। আম্মু কাঁদলেই চোখ ফুলে গোল্লা গোল্লা হয়ে যেতো, নাক গাল লাল হয়ে যায়! মানুষ বুঝতো। আমার আবার ম্যালা দু:খ ছিলো! কারন আমি কাঁদলে আমার চোখ ফুলতো না, নাক লাল হতো না! কেউ যদি বুঝতেই না পারলো আমি কেঁদেছি তাহলে এই জীবনে কেঁদে কী লাভ, বলেন!?
মাঝে মাঝে আমার ভাই সেহরির শেষ দিকে টর্নেডোর গতিতে হামলা দিতো- 'আমাকে কেনো তোমরা ডাকলা না!? আমি রোজা রাখবো!" বলেই কান্না! দেখা গেল আযান দিয়ে দিয়েছে সেই কখন আর আম্মু কাতিবকে দুধ ভাত খাওয়ায় দিচ্ছেন, ভাইয়ের সেহরি! ও একটা কথা, দুধ-ভাত কিন্তু আমাদের বাসায় সুপার হিট খাবার ছিলো! আব্বু, আমার ছোটো ভাই, আমার পছন্দের খাবার। আর শুধু দুধ-ভাত হলেই হতো না একটা কলা থাকা ছিল মাস্ট! কলা না থাকলে দুধ-ভাত খাওয়া ক্যান্সেল।
 
"চারিদিকে শুন্যতা আর শুন্যতা" ।  @অদৃশ্য কাব্য


সারাদিন শেষে আমরা আবার সবাই ইফতার করতে বসতাম। আযানের ৫/৭ মিনিট আগে আমাদের রুলস ছিলো মোনাজাত করার। কোনোদিন আব্বু করতেন, কোনোদিন আম্মু। কিন্তু আব্বু সবসময়ই আম্মুকে বলতেন তুমি সুন্দর করে বলো, তুমিই করো! আমিও কয়েকদিন করেছি। কিন্তু লজ্জায় আল্লাহর কাছে কী চাই সবাইকে শোনাতে চাইতাম না! আমার সবসময় একটাই চাওয়া ছিলো -আল্লাহ আমি যেনো এবার পরীক্ষায় খুব ভালো রেজাল্ট করতে পারি! আব্বু-আম্মুকে যেনো অনেক খুশি করতে পারি! যেহেতু তখন বেশিরভাগ রোজার আগেই বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়ে যেতো তাই পুরা রোজা জুড়ে আমার কমন দোয়া এটাই ছিল! আমার ছোটোভাই তখনও বিশেষ মূল্যহ্রাসে ছিলো! তাকে হাজার চেষ্টা করেও কেউ মোনাজাত ধরাতে পারেনি।
আব্বু-আম্মু দুজনই সাহিত্যের মানুষ। মোনজাতও সেইভাবে করতেন। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম! এতো সুন্দর সুন্দর কথা আব্বু -আম্মু বলতেন আমরা শুধু আমীন আমীন বলতাম। মনে হতো এই মোনাজাত অনন্তকাল চললেও আমরা ইফতার সামনে নিয়ে বসে থাকবো...! দাদা-দাদি, নানা-নানিসহ আমাদের পূর্বপুরুষ, আত্নীয়-স্বজন, পাড়া- প্রতিবেশি, বন্ধু-বান্ধবী- কলিগ থেকে শুরু করে দেশের - বিদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ইহকাল, পরকাল কোনো বিষয়ই বাদ যেতো না। আমি মনে মনে ভাবতাম মোনাজাতে এতো কিছু কীভাবে মনে রাখেন!
আমার আম্মু ভীষন আবেগপ্রবণ, আবার কাঁদতেন... কিন্তু এই কান্না সেই শেষরাতের কান্নার মতো হতো না... এই কান্না আমরা সবাই শুনতাম কিন্তু শেষরাতের সেই কান্না শুধু উপরওয়ালাই জানতেন...
আজ এতো বছর পর কতো কিছুই বদলে গেছে... বিয়ে হয়েছে, মা হয়েছি। সেহরিতে সবার আগে উঠি, তারপর সবাইকে ডাকি। এখন আর বিছানায় অলসতায় উঠি উঠি করি না, মাইকে বলতেও শুনি না 'তাড়াতাড়ি উঠি যাউক্কা আর পনেরো মিনিট বাকী!"
 
"চারিদিকে শুন্যতা আর শুন্যতা" ।  @অদৃশ্য কাব্য
প্রতিদিন চোখে ভাসে ঐ যে আম্মু তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ছেন আবার মনে হয় আম্মুর কান্নার শব্দ শুনছি... আমাদের সিলেটের টিলাগড়ের সেই ছোট্ট বাসাটা, যে বাসায় নিজের কোনো রুম ছিলো না... কিন্তু কী শান্তি ছিলো... সেহরিতে ওযুর পানি নিয়ে আব্বুর বিনয়ী কণ্ঠস্বর... সেহরিতে না ডাকায় ছোটোভাইয়ের গগনবিদারী কান্না... বুকটা ভারী হয়ে আসে... শেষ রাতে কীসের যেনো হাহাকারে নি:শ্বাস নিতে কষ্ট হয়... চারিদিকে শূন্যতা আর শূন্যতা...
আবিষ্কার করি, আমি আসলেই অনেক বড়ো হয়ে গেছি -
তাই আজ আমিও আম্মুর মতো না হলেও মোনাজাতে অনেক কাঁদতে পারি...

খাদিজা তুল কোবরা কাব্য
১২ এপ্রিল, ২০২২
মালাবী, আফ্রিকা।



ধন্যবাদ সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য।

ধন্যবাদান্তেঃ------
মওদুদ আহমেদ মধু (মিঃ মধু)
@মিঃ বুদ্ধিমান গাধা
#_দৃশ্যমান_জীবনের_অদৃশ্য_কাব্য✅







No comments

Powered by Blogger.